এইচ এম হাসিবুল হাসান, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) : মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের দুর্গম চর বাঘুটিয়ায় পা রাখলেই চোখে পড়ে ভাঙনের দগদগে ক্ষতচিহ্ন। কোথাও ফাঁকা ভিটে, কোথাও নদীগর্ভে হঠাৎ ধসে পড়া বাড়ির ভাঙাচোরা অবশিষ্ট। এক সময় প্রাণচঞ্চল এই চরের মানুষ এখন থাকেন আতঙ্কে। নদীতে কখন তাদের আবাসস্থল বিলীন হবে সেই চিন্তা তাদের।

গত দুই মাসেই ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে দুই শতাধিক পরিবার। দশ বছর আগেও যেখানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস ছিল, এখন সেখানে ১৪ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের অনেকেরই ক্ষেত-খামার নেই, আবার কারও নেই মাথা গোঁজার স্থান।

স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, “বাঘুটিয়া চরের মানুষ প্রতিদিন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ হারিয়েছেন জমি, কেউ ঘরবাড়ি, আবার কেউ হারিয়েছেন সন্তানদের পড়ালেখার জায়গা। অভিযোগ-প্রতিবাদ আর সাময়িক প্রতিরোধের মধ্যেই প্রতিদিন যমুনার গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে এসব মানুষের স্বপ্ন, আশা আর ভবিষ্যৎ।”

কৃষক শাহীন মিয়ার চোখে ছিল অশ্রু। তিনি বলেন, “ড্রেজার বসিয়ে নদীর বুক কেটে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। যমুনায় আমাদের ঘরবাড়ি মিশে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।”

একই কষ্টের কথা শোনালেন কৃষক শহিদুল ইসলাম। এই কৃষকের ভাষ্য, “আগে ভাঙন ছিল, কিন্তু এত ভয়াবহ ছিল না। আমার ৪০ বিঘা জমি নদীতে গেছে। দুইটা ঘর করেছিলাম, সেগুলোও নদী খেয়ে ফেলেছে। এখন আর জানি না কোথায় যাব, কিভাবে বাঁচব।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, যমুনায় অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলন ভাঙনকে তীব্র করে তুলছে। রাহাতপুর এলাকায় ইজারা দেওয়া বালুমহল ছাড়াও পারুরিয়া এলাকায় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ইয়াছিন বলেন, “কয়েক দফা স্থানীয়রা বাল্কহেড আটক করলেও কার্যকর ব্যবস্থা হয়নি। নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ হলেই ভাঙন অনেকটা কমে যাবে।”

দৌলতপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিয়ান নুরেন বলেন, “নিজভারাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন বিলীন হয়ে গেছে যমুনায়। পারুরিয়া ও রংদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিদ্যালয় দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরের কাজ চলছে।”

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ১৪ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। চরাঞ্চলে বালু বেশি থাকায় সামান্য পানির চাপেই ভাঙন দেখা দেয়, ফলে প্রতিবছরই নতুন করে ভাঙন প্রতিরোধে উদ্যোগ নিতে হচ্ছে।”