আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুরে নতুনভাবে গঠিত গাজীপুর-৬ সংসদীয় আসন সোমবার (১০ অক্টোবর) হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হয়েছে। আদালত বাগেরহাট-৪ আসন পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন। এই রায়ে বৃহত্তর টঙ্গীসহ অবিভক্ত গাজীপুর-২ নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর-৬ মনোনীত প্রার্থী ড. হাফিজুর রহমান বলেন, গাজীপুর-৬ আসন গাজীপুরের মানুষের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল। টঙ্গী, গাছা ও হায়দারাবাদের মানুষ এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আমি আশা করি নির্বাচন কমিশন আপিলসহ আইনি উদ্যোগ নেবে। আমি সকল রাজনৈতিক দল ও মনোনয়নপ্রত্যাশীকে অনুরোধ করছি—আমরা সম্মিলিতভাবে গাজীপুর-৬ এর নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করব ইনশাআল্লাহ।

গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামী আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, গাজীপুর শিল্পাঞ্চল ও জনঘনত্বের শহর। এখানে ছয়টি আসন থাকা গণতান্ত্রিক ভারসাম্যের জন্য অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই ছিল ন্যায়সংগত এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার পদক্ষেপ। আমরা চাই জনগণের আশা ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিষয়টি যথাযথভাবে সমাধান হোক।

হাইকোর্টের রায়ে হতাশা প্রকাশ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, নাগরিক ও ভোটারদের জন্য নতুন সম্ভাবনার সূচনা করা হত, কিন্তু আজকের রায় তা ব্যর্থ করেছে। তাঁর চাচাতো ভাই, মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন সরকার বলেন, আমি আপিলে যাব এবং গাজীপুর-৬ ফিরে পাব। সবাইকে শান্ত ও ধৈর্য ধারণের আহবান জানাচ্ছি। নিরাশ না হওয়ার জন্য অনুরোধ করি। জয় আমাদেরই হবে, ইনশাআল্লাহ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাজহারুল আলম মন্তব্য করেন, গাজীপুরে ৫টি আসন বহাল থাকলে এটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় আসন বৈষম্য। বাসন মেট্রোথানা ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, মানবিক—যেকোনো যৌক্তিক কারণেই গাজীপুর হেডকোয়ার্টার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কালিয়াকৈরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। আশা করি মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশনের গেজেট বহাল রাখবেন।

গাজীপুর নাগরিক ফোরামের সভাপতি মোঃ হেদায়েত উল্লাহ বলেন, গাজীপুরের জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক বাস্তবতা বিবেচনায় ছয়টি আসনই যৌক্তিক ছিল। নতুন আসন বাতিল হলে নাগরিক অংশগ্রহণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যাহত হবে।

প্রবীণ সাংবাদিক নুরুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর-২ এ আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা এবং গাজীপুর-৬ বাতিলে আমরা দুদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। টঙ্গী, গাছা ও পূবাইল এলাকার মানুষ এখন না প্রার্থী পাচ্ছে, না এমপি পাচ্ছে। এটা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য চরম হতাশার।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গাজীপুর-৬ আসন বাতিলের ফলে তাদের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, "আমরা ভেবেছিলাম নতুন আসনে আমাদের এলাকার উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে, কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে যেন সেই স্বপ্ন থমকে গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায় টঙ্গী ও গাজীপুর-৬, গাজীপুর-২ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রচারণা এবং স্থানীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।