২০০৬ সালের ৬ এপিল প্রতিদিনকার ন্যায় সকাল আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে সাতকানিয়া সাকারী কলেজে পৌঁছান তৎকালীন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কলেজ সভাপতি বি এ ১ম বর্ষের মেধাবী ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম সবুজ। কলেজে কিছুক্ষণ অবস্থান করতেই ছাত্রলীগের চিহ্নিত বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ক্যাম্পাসে এসে শিবির কর্মীদের উপর চড়াও হয়। সন্ত্রাসীরা শিবির কর্মী দেখলেই মারধর শুরু করে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিকবিদিক ছুটতে শুরু করে। আর মারপিটে আহত শিবির কর্মীরা চিৎকার শুরু করে বাঁচার আকুতি জানায়, ক্যাম্পোসের এহেন পরিস্থিতি দেখে জাহাঙ্গীর ক্যাম্পোসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অধ্যক্ষের অফিসে যান। সেখানে গিয়ে অধ্যক্ষকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার জন্য আকুতি জানান। এরমধ্যে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অধ্যক্ষের রুমের দিকে এগিয়ে আসলে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার চেষ্টা করেন শিক্ষকরা। কিন্তু ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে অধ্যক্ষের রুমে দরজা ভেঙে সেখানে আশ্রয় নেয়া শিক্ষার্থীদের মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর আলম সবুজকে অধ্যক্ষের রুম থেকে অপহরণ করে মারধর করতে করতে চরপাড়া দিয়ে তৎসময়ে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্থান সতিপাড়ায় নিয়ে যায়। শুরু হয় অমানবিক নির্যাতনের দ্বিতীয় পর্ব। তাকে সতিপাড়াস্থ আলিয়া মাদ্রাসার একটি কক্ষে আটক রেখে বর্বরোচিত কায়দায় সন্ত্রাসীরা পালাক্রমে অকথ্য নির্যাতন করতে থাকে। পরবর্তিতে সেখান থেকে বের করে মাঠিতে ফেলে লাঠি, হকিস্টিক দিয়ে বুকে পিঠে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে। নির্যাতনের দৃশ্য অবলোকন করেন পার্শ্ববর্তী চরপাড়ার অসংখ্য মহিলা। তখন জাহাঙ্গীরের চিৎকারে তাকে বাচাঁতে মহিলাদের আর্তনাদ আর আর্তচিৎকারেও সন্ত্রাসীদের হৃদয় গলেনি। উল্টো মহিলাদের দিকে ঔদ্ধতভাবে তেড়ে যায় সন্ত্রাসীরা। দীর্ঘ দুই ঘন্টা এভাবে পাশবিক নির্যাতনের পর বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ সংকটাপন্ন অবস্থায় জাহাঙ্গীরকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় । সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জাহাঙ্গীর। এদিকে শিবির নেতা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সাতকানিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনতা শোকে বিহ্বল। শোকার্ত জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষোভে উত্তাল পুরো সাতকানিয়া।

পরদিন সাতকানিয়া হাইস্কুল মাঠে লাখো জনতার উপস্থিতিতে প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে গ্রামের বাড়ি আফজল নগরে শহীদের দ্বিতীয় জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়। শাহাদাতের তিনদিন পর আয়োজন করা হয় বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ব বরেণ্য মুফাচ্ছিরে কুরআন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী। প্রধান বক্তা ছিলেন তৎকালীন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি এহছানুল মাহবুব জুবায়ের। হাসমতের দোকানের পার্শ্ববর্তী মাঠে লাখো জনতার ঢল নামে। বাঁধ ভাঙা জোয়ারে বিস্ফোরণোন্মুখ ছাত্র জনতার শ্লোগানে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। আল্লামা সাঈদী এবং কেন্দ্রীয় সভাপতি এহছান মাহবুব জোবায়েরে তেজোদ্বীপ্ত বক্তব্যে উপস্থিত লাখো জনতার শহীদের আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। ২৫ তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শিবিরের কর্মসূচী : ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে খুব বেশি জাকজমকভাবে কোন কর্মসূচী পালন করতে না পারলেও এবারে শহীদ জাহাঙ্গীর আলমের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখা আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। ৬ এপ্রিল রোববার সকাল সাড়ে নয়টার সাতকানিয়া সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের সাবেক প্যানেল স্পিকার ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত ইসলামীর আমীর আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী। উক্ত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সংশ্লিষ্টদের যথাসময়ে উপস্থিত থিাকার জন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শিবির সভাপতি আসিফুল্লাহ মুহাম্মদ আরমান অনুরোধ জানিয়েছেন।