তীব্র তাপদাহের কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁিকতে পোল্ট্রি শিল্প খাত। কর্পোরেট ফার্ম, প্রান্তিক পর্যায়ের খামারী, পরিবেশকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা চরম শঙ্কায় দিন গুনছেন। প্রতিদিনই হিট স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মুরগী। দিন-রাত খামারগুলোতে ফ্যান চালিয়ে, খাবার স্যালাইন ও মুরগীকে ঠান্ডা রাখতে সহায়ক মেডিসিন প্রয়োগ করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

খামারিরা জানিয়েছেন, তীব্র তাপ দাহের কারণে মুরগি হিট স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। যখন স্ট্রোক করে তখন মুরগিগুলো হাফিয়ে যায়। হাফিয়ে গেলে মুরগি বাড়ন্ত হয়ে উঠতে বাধাগ্রস্থ হয়। এমতাবস্থায় ওই মুরগি যে পরিমাণ খাবার খাওয়ার কথা সেই পরিমাণ খায় না। তখন ক্ষতির সম্মুখিন হওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয়। খামারে পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা থাকলও যে পরিমাণে গরম পড়ছে, তাতে ফ্যানের বাতাসেও কাজ হচ্ছে না। প্রান্তিক খাবারিরা শীত ও গরম দু’টোতেই ঝুঁকি ও শঙ্কায় থাকেন। শীতের সময়ে অতিমাত্রার ঠান্ডার কারণে মুরগী মরে এবং গরমের সময়ে তাপ দাহের কারণে হিট স্ট্রোকে মারা যায়, তবে বৃষ্টির সময়ে ঠান্ডা বা গরমে কোনো ঝুঁকি না থাকলেও বড়সরো প্রাকৃতিক দূর্যোগে পড়ে ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। বর্তমানে মাত্রারিক্ত গরমের কারণে চরম ঝুঁকি ও শঙ্কাতে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর দৌলতপুরস্থ পাবলা কারিকরপাড়া এলাকার মের্সাস লিয়াকত পোল্ট্রি ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী মো. শাহিদুর রহমান টিটো জানান, তীব্র গরমের কারণে প্রচুর পরিমাণে মুরগি হিট স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। সাধারণত বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে এই স্ট্রোকের প্রবনতা দেখা দেয়। এ সময় মুরগিগুলো হাপিয়ে ওঠে। হাফিয়ে গেলে মুরগি বাড়ন্ত হয়ে উঠতে বাধাগ্রস্থ হয়। এমতাবস্থায় ওই মুরগি যে পরিমাণ খাবার খাওয়ার কথা সেই পরিমাণ খায় না এবং মারা যায়। আমরা খামারে পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা বিশেষ করে ২৪ ঘন্টা ফ্যান চালিয়ে রাখছি, স্যালাইনসহ মেডিসিন খাওয়াচ্ছি তবু হিট স্ট্রোক থেকে রেহাই মিলছে। পাশাপাশি বর্তমানে উৎপাদন বেশি, তবে চাহিদা না থাকায় আরো লোকসানের মুখে পড়ছি। সবমিলিয়ে বর্তমান সময়ে চরম ঝুকি ও শঙ্কার মধ্যে আছি।

ফুলতলা উপজেলার দামোদর এলাকার খামারি শান্তনু বিশ^াস জানান, প্রতি বছরই হিট স্ট্রোকে পড়ে বহুসংখ্যর মুরগি মারা যাচ্ছে। বর্তমানে আমার খামারে ৭’ ব্রয়লার মুরগি আছে। যার প্রতিটির ওজন ২ কেজি করে। গরমের কবলে হিট স্ট্রোক করে প্রতিদিন ২/৪ মুরগি মারা যাচ্ছে। ২৪ ঘন্টা ফ্যান চালিয়ে রাখছি, উন্নতমানের স্যালাইন খাওয়াচ্ছি, সাথে মুরগির শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য মেডিসিনও খাওয়াচ্ছি। তারপরও বর্তমানে তীব্র গরমের কারনে মুরগি নিয়ে শঙ্কা ও ঝুঁকিতে আছি। সামনে তো গরম আরো বাড়বে।

সাদিক পোল্ট্রি এন্ড ফিড এর স্বত্ত্বাধীকারি টিপু মোল্যা জানান, প্রতিবছরই অতিরিক্ত গরমের কারণে খামারি ও পরিবেশকরা ব্রয়লার মুরগি হিট স্ট্রোকের সম্ভবনা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা চরম ঝুকিতে থাকে। তবে এসময় সঠিক পরিচর্চা বিশেষ করে পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা, সঠিক নিয়মে খাবার পরিবেশন, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত মুরগিকে খাওয়া হতে বিরত থাকা, পাশাপাশি ম্যানেজমেন্টকে সঠিক ভূমিকা পালন করাসহ বিবিধ বিষয়ে খেয়াল রাখলে কম মুরগি কম মারা যাবে।

খুচরা মুরগি বিক্রেতা আবু বকর সিািদ্দক জানান জানান, বর্তমানে ব্যাপক গরম পড়তে শুরু করেছে। আমি স্থানীয় এলাকা বিশেষ করে ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা এলাকা হতে পাইকারি মুরগি কিনে নিয়ে খুচরা বাজারে বিক্রি করে থাকি। বর্তমানে এমন গরম পড়ছে যে, দিনের বেলায় ভ্যানে করে মুরগি আনা যাচ্ছে না। আনতে গেলেই রোদে খাচার ভেতর দু’চারটা মুরগি হিট স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। কোনো উপায় নেই, দোকান ফাকা তবুও দিনের বেলায় মুরগি আনছি না, সন্ধ্যার পর গরম কমলে মুরগি আনবো।

দিঘলিয়া উপজেলার ভেটেরিনারী সার্জন ডা. মো. শাহাদাত হোসেন জানান, এসময় বাড়তি সচেনতাটা বেশি জরুরী। বিশেষ করে টিনের সেডের খামার হলে, সেডের নিচে ইনসুলেটর ব্যবহার করতে হবে। ৩/৪ ঘন্টা পর পর পানি পরিবর্তন করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানি পান করানো। ওই পানি সাথে অবশ্যই ভিটামিন সি খাওয়াতে হবে। পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা রাখা। অনেকে চটের বস্তা দিয়ে খামার ডেকে রাখে, এটা ঢেকে রাখা যাবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, এ সময় যদি মুরগিকে ভ্যাকসিন করতে হয়, তবে অবশ্যই ভোরে (৬ টার আগে) করতে হবে।

অনেকেই ভূল করে দিনের বেলায় ভ্যাকসিন করে থাকেন, কোনো অবস্থাতেই দিনের বেলায় ভ্যাকসিন করা যাবে না, এতে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি আরো বাড়বে।

খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. মিজানুর রহমান এ জানান, যেহেতু গরম কাল চলছে, তাই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া সাধারনত এপ্রিল মে মাসে গরমের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। বৃষ্টিপাত কম থাকার কারনেই এমন গরম অনুভুত হচ্ছে। বর্তমানে তাপপ্রবাহ চলছে, শনিবার খুলনার তাপমাত্রা ৩৬.০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং খুলনা বিভাগের সর্ব্বোচ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৩৭.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস।