আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অস্ত্রের চেয়ের ভয়াবহ হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভার আগে সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, নির্বাচনে কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং তাদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা। বিশেষ করে নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে কমিশন। সেই সঙ্গে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে যে কোনো ধরণের প্রযুক্তি-নির্ভর হস্তক্ষেপ রোধে আমরা সতর্ক।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে সন্ত্রাস দমন এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলবে। আমরা চাই স্বচ্ছ নির্বাচন। রাতের আঁধারে কোনো কার্যক্রম নয়, দিনের আলোতেই সব কিছু করতে চাই। যাতে করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়। আমরা জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই। তা না পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ, এম, এম, নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া আগামী নির্বাচনে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করাও আরেকটি চ্যালেঞ্জ। কারণ, মানুষ অতীতে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলো। স্বচ্ছতার সাথে নির্বাচন আয়োজন করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। আমরা রাতের বেলায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকান্ড করতে চাই না, দিনের বেলায় সকল কাজ হলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলে আয়োজিত নির্বাচন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে আমরা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। সবাই মিলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে না পারলে দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল বা অপতথ্য ছড়ানোর বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে। আগামী নির্বাচনকালে অপতথ্যের বিস্তার এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর অপব্যবহার বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে। আমরা দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এসমস্যার সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে কাজ করছি। এটি আধুনিক যুগের আধুনিক হুমকি, যা অস্ত্রের চেয়ে মারাত্মক। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করতে এবং এ সমস্যা সমাধানে প্রচলিত গণমাধ্যমগুলোর সহায়তা প্রয়োজন। একই সাথে মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে গণমাধ্যমের ভূমিকা দরকার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচন আয়োজনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জ উতরাতে পারবো বলে বিশ^াস আছে। নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সারাদেশে সম্ভাব্য আইন-শৃঙ্খলাজনিত হুমকিগুলো পর্যালোচনা করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোন আশঙ্কা থাকলে তা মোকাবেলার প্রস্তুতি আমাদের থাকবে। ২০২৪ এর ৫ আগস্ট ও তার ঠিক পরের সময়টিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিলো। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি সে সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। নির্বাচনের তারিখ আসতে আসতে পরিস্থিতি আরো ভালো হবে বলে আশা করা যায়।
ব্রিফিংকালে খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফারাজী বেনজীর আহম্মেদ, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তা-সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ারকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।