খুলনাঞ্চলের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত স্টাফ কোয়ার্টারগুলোর এখন বেহাল দশা। বহু ভবন বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। এতে একদিকে বাসস্থান সংকটে ভুগছেন কর্মচারীরা। অন্যদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। দীর্ঘদিনেও হয়নি সংস্কার, হয়নি নতুন ভবন নির্মাণ। এমন বাস্তবতায় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন পুরোনো, জরাজীর্ণ ভবনে। খুলনার জোড়াগেট এলাকার সিঅ্যান্ডবি কলোনীর সি ব্লকের এমনই এক ভবনে পরিবার নিয়ে থাকেন সরকারি কর্মচারী মো. রোকনুজ্জামান। তিনতলা ভবনের সর্বোচ্চ তলায় তার বাস। প্রতিটি মওসুমেই রোদ, বৃষ্টি কিংবা ঝড়ের সময় ভবনের ভগ্নদশা তাকে আতঙ্কিত করে তোলে।

মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে, ফাটল দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ে। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে দিন কাটে ভয়ে ভয়ে। ভবনের চারিপাশে ময়লা আবর্জনা। অল্প বৃষ্টিতেই হয় জলাবদ্ধতা। আর ভবনগুলো জরাজীর্ণ হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে না থেকে বহিরাগতরা থাকছেন। ফলে পরিবেশগত অবক্ষয় বাড়ছে।’

৩৯ একরের এই কলোনিতে ষাটের দশকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পাঁচটি ক্যাটাগরিতে নির্মিত হয়েছিল ৫১টি ভবন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এক যুগ আগেই অনেক ভবন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২৮টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ও বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্য ভবনগুলোর অবস্থাও অনেকটাই নাজুক। কোথাও পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে পড়েছে, কোথাও দরজা-জানালা ভাঙা, ছাদের পানি চুঁইয়ে পড়ে। বর্ষাকালে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে বাড়ে সাপ, পোকামাকড় আর মশার উপদ্রব।

কলোনির আরেক বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে এসব ভবন স্থায়ী মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। এছাড়া পরিত্যক্ত ভবনগুলো কেন্দ্র করে মাদক সেবন, অবৈধ কার্যকলাপ ও কিশোর গ্যাং-এর উৎপাত বাড়ছে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভবনগুলোর দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে বহিরাগতরাও এখানে গোপনে বসবাস শুরু করেছে। এতে তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ছে।