নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন টেটা বিদ্ধসহ প্রায় ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার খাগকান্দা ইউনিয়নের বাহেরচর এলাকায়। এ ঘটনায় ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে কয়েকটি বাড়ী।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে বাহেরচর ও কাকাইলমোড়া গ্রামবাসীর মধ্যে মামলা মোকদ্দমা, গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। উক্ত দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে শুক্রবার বিকেলে বিএনপি ইউনিয়ন সভাপতি বেলায়েত হোসেন এবং সেক্রেটারী জাকারিয়ার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ ও হাতাহাতি হয়। এ নিয়ে গত তিনদিন ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
ঘটনার সময় খাগকান্দা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেলায়েত হোসেন এর অনুসারি কাকাইলমোড়া এলাকার ইদ্রিস আলী এবং সাধারণ সম্পাদক বাহেরচর এলাকার জাকারিয়ার লোকজন টেটা বল্লম, লাঠিসোটা এবং অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে একে অপরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। ফলে এ ঘটনায় ৫ জন টেটাবিদ্ধসহ প্রায় ২০ জন রক্তাক্ত আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৮ জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকীদেরকে আড়াইহাজার ও সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জাকারিয়ার পক্ষ নেন ওলামালীগের ইউনিয়ন সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন এবং ইদ্রিস আলীর পক্ষ নেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন। টেটাবিদ্ধরা হচ্ছেন মকবুল, মঞ্জুর, জসিমসহ ৫ জন। আহত অন্যরা হচ্ছেন, ফরহাদ, মনির, ফজি, শামীম, সাইদুল, সোহাগ, ডালিম, রনি, মীম প্রমুখ।
ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জানান, ইদ্রিস আলী আওয়ামীলীগের লোক নিয়ে আমাদের উপর হামলা করলে আমরা প্রতিহত করি। অপর দিকে ইদ্রিস আলী জানান, জাকারিয়া আওয়ামীলীগের লোকজন নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। তিনি তার পক্ষের লোকজনের ১০টি বাড়ী ঘর ভাংচুর করা হয়েছে বলে জানান।
আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাসিরউদ্দিন জানান, দুই গ্রামবাসির মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুরিশ কাজ করছে।
সোনারগাঁওয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, আহত ১০
পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের মহিলাসহ ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় উপজেলার বারদী ইউনিয়নের শান্তিরবাজার গুদারাঘাট ও মসলেন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। আহতদের সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মান্দারপাড়া গ্রামের শুক্কুর আলীর ছেলে মো.ডালিম মিয়া একই গ্রামের ওয়াদুদ বেপারীর ছেলে নুর মোহাম্মদ ওরফে নুরা পাগলাকে ৪ মাস আগে পিকআপ ভ্যান কেনার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ধার দেন। টাকা ধার নেওয়ার পর থেকে ডালিমের সঙ্গে নুর মোহাম্মদ দেখা করেন না। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বারদীর শান্তিরবাজার গুদারাঘাট এলাকায় ডালিমের সঙ্গে নুর মোহাম্মদের দেখা হয়। ওই সময়ে তার কাছে টাকা ফেরত চান ডালিম। এ নিয়ে নুর মোহাম্মদের সঙ্গে ডালিমের তর্ক বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে উভয়ে মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরে নুর মোহাম্মদ ডালিমকে ধাওয়া করে তার গ্যারেজে নিয়ে যায়। ডালিম ধাওয়া খেয়ে আত্মরক্ষার জন্য গ্যারেজে দরজা লাগিয়ে দেয়। এসময় নুর মোহাম্মদের সমর্থকরা এসে সেই গ্যারেজের দরজা, জানালা কুপিয়ে নষ্ট করে। তারা দ্বিতীয় দফায় মসলেন্দপুর গ্রামে নুর মোহাম্মদ ও হাবিবুর রহমান হাবুরে নেতৃত্বে শফিকুল ইসলাম, ফালাইন্না, আশিক, সুমন মিয়া, মোরছালিন, সৈকত মিয়া ও রিপন মিয়া লাঠিসোটা, দা, বল্লম, হকিস্টিক ও চাপাতি নিয়ে ডালিমের বাড়িতে গিয়ে হামলা করে। হামলাকারীরা শালিম, আব্দুল হাই, ওয়াসকুরুনী, রিনা বেগম, জয়নাল আবেদিনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাক্তকভাবে আহত করে। হামলার সময় ডালিমের লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুলে নুর মোহাম্মদের সমর্থক শরীফ ও জনু মিয়া, রিপন মিয়াকে আহত করে। এক পর্যায়ে নুর মোহাম্মদের সমর্থক ডালিমের বাড়িঘর ভাংচুর চালায়। পরে তারা ডালিমের বাড়ি থেকে দুটি গরু, একটি ছাগল, চারটি ভোড়া ও বাড়ির আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ঘটনায় ডালিমের চাচাতো ভাই আহত আব্দুল হাই বাদি হয়ে সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।