মাত্র তিন ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে পানিমগ্ন হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা। গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সময়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে, যা ‘অতি ভারী বৃষ্টিপাত’ হিসেবে চিহ্নিত। হঠাৎ এ বৃষ্টিতে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও আবাসিক এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা দেয়, ফলে শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ। বৃষ্টিতে আগ্রাবাদ, কাতালগঞ্জ, জিইসি মোড়, কাপাসগোলা, হালিশহরসহ বহু এলাকায় পানি জমে যায়। এতে করে অফিসগামী মানুষ, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারীদের চলাচলে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। চৌমুহনী, বাকলিয়া, রাহাত্তারপুল ও জিইসি মোড় এলাকায় যান চলাচল প্রায় অচল হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও পানির স্তর হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে মোট ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের পূর্বাভাস মতে, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে এর অবস্থান প্রবল থাকায় আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কাতালগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সাইফুর রহমান বলেন, “বৃষ্টি কম হলেও কাতালগঞ্জে পানি উঠবেই। এটা যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। সকালে বের হতেই দেখি রাস্তা পানিতে থইথই করছে।”

আগ্রাবাদ এলাকার এক বেসরকারি চাকরিজীবী সোহেল চৌধুরী বলেন, “আজকের বৃষ্টির কারণে পানিবদ্ধতা হলেও, গতকালও পানি জমেছিল। এই এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা ডুবে যায়, গাড়ি চলা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অফিসে পৌঁছাতেও দেরি হয়।” নগরীর দীর্ঘস্থায়ী পানিবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চারটি বড় প্রকল্পে পানি নিষ্কাশনের উন্নয়নে কাজ চলছে, যার মোট বাজেট ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি হচ্ছে নগরীর ৩৬টি খালের খনন ও সংস্কার প্রকল্প, যার বাজেট ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে ২৫টি খালের কাজ শেষ হয়েছে, ৬টির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, তবে কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ ও মুরাদপুর এলাকার হিজড়া খালের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। এই খালটির বর্তমান অবস্থা এখনও সংকটজনক রয়ে গেছে। অন্যদিকে, আগ্রাবাদ এলাকায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বক্স কালভার্টে জমে থাকা আবর্জনা। এই কালভার্ট পরিষ্কারে কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে নগরবাসীর প্রশ্ন, এত প্রকল্পের পরও পানিবদ্ধতা নিরসনের দৃশ্যমান সুফল কবে মিলবে?