শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এখন মাঠজুড়ে দেখা যাচ্ছে সবুজে মোড়া মাসকলাই গাছের ছড়াছড়ি। আর কিছুদিন পরই এসব গাছে আসবে ফুল-ফল, ফলে ব্যস্ত সময় পার করবেন কৃষকরা। এ যেন শীতের আগমনী বার্তাসহ কৃষকের মুখে ফুটে ওঠা আশার হাসি।

জেলার গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট, শিবগঞ্জ এবং সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে এ মৌসুমে মাসকলাই চাষ হয়েছে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবার গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রায় ১,৮০০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে মাসকলাইয়ের উৎপাদন খরচ কম, ঝুঁকিও সীমিত। তাই কৃষকরা দিন দিন এ ফসলের প্রতি ঝুঁকছেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে জমি প্রস্তুত করে মাসকলাইয়ের বীজ বপন করা হয়। এরপর আগষ্ট-সেপ্টেম্বরে গাছ বড় হতে শুরু করে এবং অক্টোবরের শেষ ভাগে ফুল ও ফল আসে। নভেম্বরের শেষে শুরু হয় উত্তোলনের মৌসুম। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ মণ পর্যন্ত মাসকলাই পাওয়া যায়। বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাইয়ের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। গোমস্তাপুরের কৃষক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, “মাসকলাই আমাদের জন্য লাভজনক ফসল। খুব বেশি সার, কীটনাশক বা শ্রম লাগে না। তাছাড়া ফসল কাটার পর মাটিতে এর গোড়া পচে জৈব সার হিসেবে কাজ করে, পরবর্তী ফসলের উৎপাদনও বাড়ায়।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মাসকলাই একটি স্বল্পমেয়াদি ও মাটিবান্ধব ডাল ফসল। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে এবং এটি মাটিতে নাইট্রোজেন স্থায়ী করতে সাহায্য করে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে কম পানি ও কম খরচে উৎপাদনযোগ্য ফসল হিসেবে মাসকলাই ভবিষ্যতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

অন্যদিকে, মাসকলাইয়ের ফুলে মৌমাছি ও প্রজাপতির ভনভনানি দেখা যায়, যা গ্রামীণ প্রকৃতিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। মাঠজুড়ে যখন হলুদাভ ফুলে ঢেকে যায়, তখন মনে হয় যেন সোনালি কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি নিজেই। সবমিলিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকেরা এখন মাসকলাই ফুল ফোটার প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন। ফুল আসলে তারা জানেন- লাভের দিনও বেশি দূরে নয়।