খুলনায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে জাল নোট কারবারিরা। বিশেষ করে ওই জাল নোট সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঈদ, কুরবানির পশুর হাট, পূজা-পার্বণকে সামনে রেখে বিভিন্ন মার্কেট, পশুর হাটকে টার্গেট করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে সম্প্রতি সময়ে নগরীতে জাল নোটে কারবারির কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একটি সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময় আটক হওয়া জাল নোটের কারবারিরা জামিনে বের হয়ে এসে আবারো এই পেশায় জড়িয়ে নতুন করে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। খুলনা মহানগরী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত কর করলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জাল নোট কারবারিরা তাদের কার্যক্রম অব্যহত রাখছে। পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দিন-রাত কাজ করলেও পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে ওই চক্রটি তাদের রমরমা বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে। এবার এক জাল নোট কারবারিকে গ্রেপ্তার করছে খালিশপুর থানা পুলিশ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নগরীর খালিশপুর থানা এলাকার বাবুস সালাম মসজিদ রোডস্থ সুন্দরবন মার্কেটের পেছনে একটি বিকাশের দোকানের সামনের পাকা রাস্তার ওপর হতে এক আসামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামী হলেন-আড়ংঘাটা থানাধীন লতার মোড় সড়ক এলাকার বাসিন্দা মোল্লা আক্তার আলীর ছেলে মো. নাজমুল হাসান রমিম (২২)। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওই আসামী আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে, বিষয়টি নিশ্চিত করছেন খালিশপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মীর আতাহার আলী।

সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম মোবাইল-৫ ডিউটি করাকালে জানতে পারে খালিশপুর থানা এলাকার বাবুস সালাম মসজিদ রোডস্থ সুন্দরবন মার্কেটের পেছনে একটি বিকাশের দোকানের সামনের পাকা রাস্তার ওপর জাল নোট সহকারে দাঁড়িয়ে আছে। তাৎক্ষনিক ওই সংবাদের প্রেক্ষিতে সঙ্গীয় অফিসার ও সঙ্গীয় ফোর্স বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ওই যুবককে তল্লাশি করে তার নিকট হতে ২২ টি এক হাজার টাকার সাদৃশ্য জাল নোট জব্দপূর্বক তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সংক্রান্তে গ্রেপ্তারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আসামী আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। জাল নোট কারবারি ব্যাপারে আক্ষেপ করে এক ভুক্তভোগী ইজিবাইক চালক জাহিদ জানান, পেটের জন্য রাস্তায় নামি। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলি, দুইটা টাকা জন্য। পরিবারের ভরণপোষণ চলে ইজিবাইক চালানো ওপর দিয়ে। আমাদের মত মানুষের সাথেও অবিচার। গত সপ্তাহের কথা। রাত তখন প্রায় ৯টা। গোয়ালখালি বাসস্ট্যান্ডের কাছে এক যাত্রী নামায়। তিনি ভাড়া দিতে তাড়াহুড়ো করে একটি ৫শ’ টাকা নোট দেন। গ্যারেজে গিয়ে মালিককে গাড়ি ভাড়া দিতেই তিনি বলেন এটা জাল টাকা। কাছে রাখিস না ছিড়ে ফেলা বিপদে পড়বি। তখন চোখে পানি এসে গেল। সারাদিন খেটে এই তার ফল পেলাম। এর সমাধান করবে কে?

মনির নামের এক ব্যবসায়ী জানান, কয়েকদিন আগে আমার দোকানে পণ্য কিনতে আসে এক নারী ক্রেতা। তিনি আমাকে ৫শ’ টাকার একটি নোট দেন। হাতে নেওয়া মাত্র দেখি টাকাটা জাল। তখন তিনি বলেন, আমি যেখান থেকে আনছি, পাল্টিয়ে আনছি। বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করছি, জাল টাকার আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। জাল নোটের চক্রটিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। নইলে সাধারণ মানুষের এদের দ্বারা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত হবে।

খালিশপুর থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর আতাহার আলী জানান, বুধবার রাতে জাল নোটসহ এক আসামীকে আমরা গ্রেপ্তার করি। ওই আসামীর নিকট হতে ২২টি এক হাজার টাকার সাদৃশ্য জাল নোট জব্দ করা হয়। ওই চক্র শনাক্তে আমরা কাজ করছি। অন্যায়কারীদের কোনো ছাড়া দেওয়া হবে না। পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, অপসাম্প্রদায়িকবিরোধী কর্মকাণ্ড, চুরি-ছিনতাইসহ সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে খালিশপুর থানা পুলিশ দায়িত্বের সাথে কাজ করবে।

এ ব্যাপারে কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম জানান, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা রয়েছে যেন নগরীতে যেন জাল নোটের ছড়াছড়ি না হয়, সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি জাল নোটের বিষয়েও আমাদের ডিবি টিমও কাজ করছে। কোরো কাছে জাল নোট পাওয়া গেছে তাদের ব্যাপারে শক্তভাবে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা তৎপর আছি, জাল নোট নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে রুট পর্যায়ে আমরা কাজ করছি।