কুমিল্লা নগরীতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও তার মায়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার ভোরে নগরীর কালিয়াজুড়ি খেলার মাঠের পাশের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তাদের মৃত্যুর সময় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। এই ঘটনা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে যারা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খাঁন।

এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে পাঞ্জাবিপরা এক রহস্যজনক ব্যক্তির ওই বাড়িতে আসতে ও যেতে দেখা গেছে।

তবে ঘটনার পর এক কবিরাজকে আটকের বিষয়ে জানিয়েছে পুলিশ সুপার। তিনি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা আব্দুর রব।

ঘটনাস্থলে বাড়ির মালিক আনিছুল ইসলাম রানা জানিয়েছেন, সাড়ে তিন থেকে চার বছর আগে কুমিল্লার আদালতের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাড়িটি ভাড়া নেন। গত বছর তার মৃত্যুর পর স্ত্রী তাহমিনা আক্তার (৫০), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে সুমাইয়া আফ্রিনসহ (২৪) তার আরও দুই ছেলে বাড়িটিতে থাকছেন।

বাড়ির মালিক আনিছুল ইসলাম রানা জানিয়েছেন, বাড়িতে তারা থাকতেন। তারা অন্য কারো সাথে তেমন কথা বলতেন না। গতকাল রাতে তার দুই ছেলে ঢাকা থেকে বাসায় আসলে তারা ঘরের দরজা খোলা দেখে। এই সময় তারা ভাবে তাদের মা ও বোন ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু বাসায় ঢুকার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তাদের কোন সারা শব্দ না পেলে জাগাতে গিয়ে দেখেন তারা নড়ছে না। পরে ৯৯৯ এ কল পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং কুমিল্লা মেডিকেল এর মর্গে পাঠায়।

নিহতের ছেলে তাজুল ইসলাম ফয়সাল বলেন, রাত ১১ টার দিকে আমি বাসায় আছি। তখন ভেবেছিলাম আম্মা ও বোন ঘুমাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর যখন তাদের কোন সারা শব্দ পাচ্ছিলাম না তখন আমি মায়ের কাছে যাই। মায়ের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি তিনি শক্ত হয়ে আছেন। বোনের কাছে গিয়েই একই অবস্থা দেখি। ফরি চিৎকার চেঁচামেচি করলে লোকজন আসে এবং ৯৯৯ এ কল দেয়। পুলিশ এসে সকালে লাশ উদ্ধার করে।

এই ঘটনার পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা নগরীতে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা প্রথমে ক্যাম্পাস তারপর নগরীর পূবালী চত্বরে বিক্ষোভ করে। এরপর তারা পুলিশ সুপার কার্যালয় সামনে গিয়ে বসে পড়ে। সেখানে কয়েক ঘন্টার বিক্ষোভের পর পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খাঁন এসে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করেন। এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন।

শিক্ষার্থী মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, আজ তার পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। থার্ড ইয়ারের সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা। কিন্তু আজ তার লাশ মর্গে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যদি এমন অনিরাপদ অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ একজন শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার অবস্থা কি? এ ঘটনা জড়িত সকলকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার অনুরোধ করছি।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, এ ঘটনায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে রেখে কাজ করছি। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে পুলিশের সবগুলো ব্রাঞ্চসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আমরা এটি অতি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।

সকালে ঘটকাস্থল পরিদর্শন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে কথা বলেন উপাচার্য ড. অধ্যাপক হায়দার আলী। তিনি বলেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমার শিক্ষার্থী আজ থাকার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কিন্তু আজ সে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার। তার সঙ্গে তার মাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা সুস্থ তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তার দাবি জানায়।