চলতি অর্থ বছর ২০২৫-২০২৬’র খরিপ-২ মওসুমে রোপা আমন আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রানুসারে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলার চাষিরা আমন চাষে ঝুঁকছেন। কিš‘ চলতি বছরের জুলাই মাসে দক্ষিনাঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে এই অঞ্চলের কৃষকের রোপা আমন আবাদ ও বীজতলা নিয়ে চরম উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার মধ্যে দিন কাটিয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মওসুমে রোপা আমন চাষিদের স্বপ্ন পানিতে নিমজ্জিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অতিবৃষ্টির কারণে খুলনাঞ্চলে রোপা আমন আবাদ ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩৮০.৩ হেক্টর জমি। যার মধ্যে ৫ হেক্টর আবাদ ও বীজতলা ৩৫৭.৩ হেক্টর। ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৫৩ হাজার ১৪২ টাকা। যার মধ্যে আবাদের ক্ষতির পরিমাণ ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা ও বীজতলার ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার ১৪২ টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ২৪, ১৪০ জন। অবশেষে শঙ্কা কাটিয়ে এই অঞ্চলের কৃষকেরা পুনরায় চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অঞ্চলের সংশ্লিষ্টরাও তাদের রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্য কৃষকদের পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে প্রনোদনা (পুনর্বাসন সহয়তা) স্বরূপ ধানের বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদান করছেন। আশা করা যাচ্ছে, রোপা আমন চাষে সকল শঙ্কা কাটিয়ে এই অঞ্চলের সংশ্লিষ্টরা এবং চাষিরা সম্বলিতভাবে চলতি অর্থ বছর ২০২৫-২০২৬’র খরিপ-২ মওসুমে রোপা আমন আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে। শঙ্কা কাটিয়ে এই অঞ্চলের চাষিরা এখন তাদের জমিতে রোপা আমন রোপনের পর আগাছা দমন ও পরিচর্যা, পোকা মাড়ক দমনসহ বিবিধ কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনাঞ্চল সূত্রে জান গেছে, এই অঞ্চলের ৪ টি জেলার সর্বমোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮০৩ হেক্টর। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে খুলনাঞ্চলের ৪ জেলার রোপা আমন (হাইব্রীড,উফশী ও স্থানীয় জাতের) আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬৩৫ হেক্টর, যার মধ্যে খুলনা জেলা ৯৩২৭০ হেক্টর, বাগেরহাট ৭৩,২৪৫ হেক্টর, সাতক্ষীরা ৮৮,৬৭০ হেক্টর ও নড়াইল জেলা ৪৩,৪৫০ হেক্টর।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সর্বশেষ তথ্যনুসারে রোপা আমন আবাদের অগ্রগতি ২,৪৪,৮১২ হেক্টর, যার হার ৮২%। যার মধ্যে জেলার অগ্রগতি খুলনা ৬৯,৬০৪ হেক্টর, হার ৭৪.৬%, বাগেরহাট ৪৫,৭০৭ হেক্টর, হার ৬২.৪%, সাতক্ষীরা ৮৬,০৪৬ হেক্টর, হার ৯৭% এবং নড়াইল ৪৩,৪৫৫ হেক্টর, হার ১০০%। চলতি বছরের জুলাই মাসে দক্ষিণাঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে এই অঞ্চলের কৃষকের রোপা আমন আবাদ ও বীজতলা নিয়ে চরম উৎকণ্ঠা ও শঙ্কার মধ্যে দিন কাটিয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মওসুমে রোপা আমন চাষিদের স্বপ্ন পানিতে নিমজ্জিত হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে খরিপ-২ মওসুমে রোপা আমন আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দেয়। অতিবৃষ্টির দরুন রোপা আমনের বীজতলা ও আবাদ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই শঙ্কা কাটাতে চলতি অর্থ বছরে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্য পুনরায় কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে প্রণোদন প্রদান করা হয়। আশা করা যাচ্ছে এই অঞ্চল সংশ্লিষ্টরা এবং চাষিরা সম্বলিত প্রচেষ্টার মাধ্যেমে মওসুমে রোপা আমন আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. সেলিম মোড়ল জানান, বৃষ্টিতে আমার রোপা আমনের বীজতলা ডুবে যায়। আমি ওই সময় ৪০ কেজি ধানের বীজ ফেলে ছিলাম। ওই বীজে প্রায় ১০ কাঠা জমিতে আমন ধান বপণ করা যেত। অবশেষে পুনরায় উপজেলা অফিস হতে বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদান করেছে। এছাড়া সব বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে। এখন জমিতে আগাছা দমন, পোকামাকড় দমনে কাজ করছি।
খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার মো. কিশোর আহম্মেদ জানান, অতিবৃষ্টি জনিত কারণে আমার উপজেলায় খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, ৩ হেক্টর জমিতে পানি জমে গেলে ঝুকি বাড়লেও পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যায়। চলতি বছরে আমার উপজেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ১৯,০৭৫ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে ১৮,০৫০ হেক্টর জমিতে রোপনের অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলার পক্ষ থেকে কৃষকদের সর্বাত্বক সহায়তা করা হচ্ছে, আশাবাদী আমাদের ও চাষিদের সম্বলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই উপজেলা রোপা আমন আবাদ ও উৎপাদন অর্জনে সফল হবে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. একরামুল হোসেন বলেন, অতিবৃষ্টি জনিত কারণে পাইকগাছা উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতির পরিমাণ ৩২,২২,৭৩৬ টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককের সংখ্যা ১৫৭০ জন। কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে প্রণোদনা (পুনর্বাসন) হিসাবে বীজ ও রাসায়নিক সার প্রদানসহ সার্বিক বিষয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরে এই উপজেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৫’শ হেক্টর। ইতোমধ্যে ৬,৭৭০ হেক্টর জমিতে রোপন সম্পন্ন হয়েছে, যার অগ্রগতির হার ৪৬%। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে বাকি রোপনের শতভাগ সম্পন্ন হবে। আশা করি আমাদের ও চাষিদের সম্বলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই উপজেলা রোপা আমন আবাদ ও উৎপাদন অর্জনে সফল হবে।