মো. আব্দুর রহমান হেলাল, ভোলা সংবাদদাতা : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা ভোলায় শুরু হয়েছে নির্বাচনী সরবতা। বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে বাংলাদেশের রানী খ্যাত দ্বীপ জেলা ভোলার রয়েছে ৪টি আসনÑ ভোলা-১ (সদর), ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন), ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) ও ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা)।

প্রতিটি আসনই হেভিওয়েট প্রার্থীদের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।

এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতায় ভোলার রাজনীতি রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জেলা বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় অস্বস্তি বাড়ছে, অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী থাকায় তারা তুলনামূলক স্বস্তিতে আছেন। বিশেষত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর মাঠ পর্যায়ে তৎপরতায় এগিয়ে রয়েছে জামায়াত (।)

মাঠ পর্যায়ে সংগঠন গোছানো ও সামাজিক কর্মকা-ে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় ভোটারদের মধ্যে জামায়াতকে ঘিরে আস্থা তৈরি হয়েছে।

বিশেষ করে ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে শিবিরের সাফল্য সাধারণ ভোটারদের মাঝে জামায়াতকে নতুন করে পরিচিতি দিয়েছে। গ্রুপিং, খুন, ধর্ষণ বা চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকার কারণে এবং সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয় থাকায় জামায়াতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস এবং নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রার্থী ঘোষণা করেছে বা প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেÑ সেটা ভোটারদের আলোচনায় স্পষ্ট।

ভোলা-১

এ আসনে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির, জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওঃ নজরুল ইসলাম, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর ও হায়দার আলী লেলিন। ইসলামী আন্দোলনের ওবায়েদ বিন মোস্তফা এবং বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থও এখানে শক্ত অবস্থান নিচ্ছেন।

অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, জনগণ বুঝে গেছে কারা দেশের শত্রু আর কারা দেশে প্রেমিক (!)

ইসলাম ও দেশবিরোধী শক্তির অপপ্রচারে জনগণ আর বিভ্রান্ত হবে না, জনকল্যাণমূলক কর্মকা- ও মানবিক সহায়তার মাধ্যমে আমরা সর্বদা জনগণের পাশে ছিলাম,তাই এবার ভোটারগণ দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়েই সেটির প্রতিফলন ঘটাবে। আমাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষরা ইন্ডিয়ান ন্যারেটিভ গ্রহণ করায় বাংলাদেশের জনগণ এবার তাদের উপর বিরক্ত, পক্ষান্তরে আমাদের মানবিক কর্মকা- ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমই জনগণকে দাঁড়িপাল্লার দিকে টানছে।

ভোলা-২

এ আসনে বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম ইব্রাহিম খলিলসহ অন্তত চারজন প্রার্থী সক্রিয় রয়েছেন। অন্যদিকে জামায়াত থেকে সাবেক জেলা আমির মাওঃ ফজলুল করিম একক প্রার্থী হিসেবে মাঠ গোছাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনের মাওঃ রেজাউল করিম বোরহানি ও খেলাফত মজলিসের মাওঃ আব্দুস সালামও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন।

মাওলানা ফজলুল করিম বলেন, আমরা চাঁদাবাজি, খুন বা দখল রাজনীতিতে নেই। জনগণের পাশে থেকে আস্থা অর্জন করেছি, এবার ভোটে তার প্রতিফলন আসবে।

ভোলা-৩

এ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ (অব.) আলোচনায় থাকলেও জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় মহাসচিব নিজামুল হক নাঈম মাঠে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মুসলেমউদ্দীন ও খেলাফত মজলিসের মাওঃ রফিকুল ইসলামও প্রার্থী হচ্ছেন।

নিজামুল হক নাঈম প্রতিদিনই বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করছেন। জামায়াতের সমর্থন থাকায় তাকে ভোটাররা সাদরে গ্রহণ করছেন এবং নির্বাচনী মাঠে তাকে এগিয়ে রাখছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

ভোলা-৪

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনজন—সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদল নেতা নূরুল ইসলাম নয়ন ও এডভোকেট সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। জামায়াত থেকে একক প্রার্থী সাবেক জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওঃ মোস্তফা কামাল এরই মধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন। ইসলামী আন্দোলনের অধ্যাপক কামাল হোসেন ও খেলাফত মজলিসের মাওঃ আবু ইউসুফও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন।

সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম বলেন, রাজপথের ত্যাগ-তিতিক্ষার মূল্যায়ন এবার দলীয় মনোনয়নে প্রতিফলিত হবে বলে আশা করি।

জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল বলেন: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশ ও দশের জন্য কাজ করে, বাংলাদেশের জনগণ এবার বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোন ব্যক্তির বিধান নয় আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে, যা জাতি- ধর্ম- বর্ণ , নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর, সুতরাং জনগণ এবার দাড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে জামায়াতে ইসলামের পাশে থাকবে।

ভোটারদের দৃষ্টি জামায়াতের দিকে

ভোটারদের আলোচনায় স্পষ্ট হচ্ছে—এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন: জামায়াতের নেতারা চাঁদাবাজি, খুন বা দলীয় গ্রুপিংয়ের সঙ্গে জড়িত না থাকায় সাধারণ ভোটাররা তাদের দিকে ঝুঁকছেন। এছাড়া সামাজিক কার্যক্রম, বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকা এবং কল্যাণমূলক প্রতিশ্রুতিগুলোও জামায়াতের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়িয়েছে।

সচেতন ভোটারদের মতে, উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি সব দলের প্রার্থীই দিচ্ছেন, তবে জামায়াতের সামাজিক নিরাপত্তা, বেকারত্ব নিরসন, ভোলার গ্যাস কাজে লাগিয়ে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা ও নদীভাঙন রোধের অঙ্গীকার ভোটারদের আকৃষ্ট করছে।

ভোটারদের একাংশের ভাষ্যÑআমরা অতীতে বহুবার প্রতারিত হয়েছি, এবার এমন কাউকে ভোট দিতে চাই, যাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল আছে।