গাজীপুর নগরের কাশিমপুর নামা বাজার এলাকায় শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে নির্মাণাধীন প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বিকেলে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেলেও, পুলিশ ও পূজা কমিটির তৎপরতায় পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও নদীর পাড়ের খোলা জায়গায় দুর্গাপূজার আয়োজন চলছিল। কারিগররা প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তবে কাজ তখনও সম্পূর্ণ হয়নি এবং রঙও করা হয়নি। দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে তারা কাজ বন্ধ করে চলে যান। সন্ধ্যায় ফিরে এসে দেখা যায়, কয়েকটি প্রতিমার হাত মোচড়ানো ও আঙ্গুলের অংশ ভাঙা, কানের মাটি খামচানো অবস্থায় আছে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায়, পূজা শুরু না হওয়ায় পাহারার ব্যবস্থা ছিল না এবং প্রাঙ্গণে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। কারা প্রতিমাগুলো ভাঙচুর করেছে তা এখনও জানা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিমাগুলো দ্রুত মেরামত করে পূজার আয়োজন অব্যাহত থাকবে। কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), মনিরুজ্জামান বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, চুরি বা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কেউ প্রবেশ করেছে। প্রতিমাগুলো তখনও নির্মাণাধীন অবস্থায় ছিল। মন্দির কর্তৃপক্ষ মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ), রবিউল হাসান বলেন, “আমি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রতিমার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করছে এবং খুব শিগগিরই জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। শান্তিপূর্ণ পূজা আয়োজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হলো ধর্মীয় সম্প্রীতি অটুট রাখা এবং দুর্গাপূজাকে স্বাভাবিকভাবে উদযাপন করানো।”

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ভারপ্রাপ্ত কমিশনার, মোঃ জাহিদ হাসান বলেন, “ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার যে কোনো অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। আমরা জনগণের নিরাপত্তা এবং শান্তিপূর্ণ পূজার আয়োজন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।”

কাশিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি, শওকত হোসেন সরকার বলেন, “প্রতিমা তখনও সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি। কে বা কারা একটি আঙুল ভেঙে দিয়েছে এবং কান থেকে সামান্য মাটি নিয়ে গেছে। স্থানীয় সম্প্রদায় বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন চালিয়ে যাচ্ছে।”

অগ্রগামী যুব সংঘ সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্ডপের সভাপতি, প্রবীর দত্ত বলেন, “প্রতিমাগুলো বিকেলে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। রাতের সময়ে কে বা কারা প্রবেশ করে পাঁচ-ছয়টি প্রতিমা ভেঙে ফেলে। অন্যগুলোও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন চালিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।”

গাজীপুর পূজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক, বাপ্পি দে বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা চলছে, ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য পরাজিত শক্তি ও ষড়যন্ত্রকারীরা কাজ করছে। কাশিমপুরে প্রতিমা ভাঙচুরও এই গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় শান্ত ও স্বাভাবিকভাবে পূজা উদযাপন চালিয়ে যাচ্ছে, কোনো উৎকণ্ঠা বা আতঙ্ক নেই।”

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জানিয়েছেন, সামাজিক সম্প্রীতি অটুট রাখতে তারা একসাথে থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। পুলিশ ও পূজা কমিটির তৎপরতায় দুর্গাপূজার আয়োজন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।