বিভিন্ন ধরনের নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে রাজশাহীর মানুষ। বৃষ্টির অজুহাতে লাগামহীন সবজির বাজার। এতে মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। বাজারে আসা একাধিক ক্রেতা জানান, আগের মতো আর ৫শ’-৬শ’ টাকায় সপ্তাহের বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন অন্তত ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা না হলে সবজি-ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করাই কষ্টসাধ্য।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি সবজির কেজি মূল্য বেড়েছে গড়ে ২০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষরা বাজারে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন। সবজির দাম বাড়ার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন। তাদের মতে টানা বর্ষণে মাঠে উৎপাদন কমে যাবার কারণে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। আবার অনেক ক্রেতা বলছেন, প্রকৃত সংকট থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন। বাজারে আসা একাধিক ক্রেতা জানান, আগের মতো আর বাজেট দিয়ে সপ্তাহের বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন অন্তত তার দ্বিগুণ অর্থ গুণতে হচ্ছে।

সরজমিনে মহানগীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি যে দামে বিক্রি করা হয়েছে তার থেকে প্রত্যেকটি সবজির দাম ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবজির ধরণ অনুযায়ী কোনো কোনো সবজির দাম বেড়েছে ২/৩ গুণ। তারপরও প্রয়োজনীয় হওয়ায় অল্প সবজি নিয়ে বাসায় ফিরছেন ক্রেতারা। মহানগরীর লক্ষীপুর কাঁচাবাজারে সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করলা বিক্রি করা হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। অথচ করলা আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। ঝিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। কয়দিন আগে ঝিঙ্গা ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া কেজিতে পটলের বেড়ে হয়ে ৬০ টাকা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাউ ধরন ভেদে প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কুমড়া প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আবার ৩০-৩৫ টাকা কেজির বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। এছাড়াও পেঁপে এবং বিভিন্ন ধরণের শাক যেমন, সবুজ ও লাল শাক, পুঁই শাকসহ অন্যান্য শাকের দামও কেজিতে ৮ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজির মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। পেঁয়াজ আগে ৫০/৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে দাম বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি ও বড় সাইজের রসুনের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। লাল ডিম ৫০ টাকা ও সাদা ডিম ৪৬ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। আটার দামও কেজিতে বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। মসুর ডালের দামও বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর মাংসের কেজি ৭৮০-৮৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি স্থানভেদে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি ও লেয়ার জাতের মুরগির কেজি স্থানভেদে ৩শ’ থেকে ৩৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচ মিশালি মাছ ৪০০-৫০০, বাইম মাছ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা ও রুপচাঁদার কেজি ১ হাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে ক্রেতা সাধারণ দ্রুত দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছর রাজশাহীতে বর্ষাকালের শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। আষাঢ় মাসের প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে খেতের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, আষাঢ়ের শেষ দিনে সবচেয়ে বেশি ৯১ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হয়। শ্রাবণেও প্রায় প্রতিদিনই অব্যাহত আছে।