সহিদুল আমাকে বলে—"তুই আমার টাকার মেশিন। যেমন বলব, তেমন চলতে হবে, না হলে তোকে মেরে ফেলব”—এভাবেই চোখের পানি ঝরিয়ে নিজের দুর্বিষহ জীবনের কথা তুলে ধরেন মোছাঃ শাহানারা খাতুন। শ্যামনগরের হাওলভাঙ্গী গ্রামের এই নারীর অভিযোগ, ইউপি সদস্য মোঃ সহিদুল ইসলাম তার জীবনে নিয়ে এসেছে নিপীড়ন, ভয়ভীতি ও নির্যাতনের এক দীর্ঘ অধ্যায়।
১৬ আগস্ট (শনিবার) সকালে শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহানারা জানান, তার প্রথম স্বামী আজিবর রহমান মারা যাওয়ার পর তিনি পাঁচ কন্যা সন্তান নিয়ে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছিলেন। সেই সময়ে এলাকার মৃত শমসের গাইনের ছেলে এবং বর্তমান ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ সহিদুল ইসলাম নিয়মিত তার বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকেন। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সামাজিক ও শরিয়াহ মোতাবেক তাকে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর শুরু থেকেই সহিদুল তার ওপর নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। শাহানারা জানান, সহিদুল বর্তমানে তার কোনো খরচ দেন না, বরং নানা অজুহাতে মারধর করেন। আটুলিয়া সোহরাবিয়া দাখিল মাদ্রাসায় এমএলএসএস পদে কর্মরত শাহানারা অভিযোগ করেন, কর্মস্থলে যাতায়াতকালে সহিদুল ও তার ভাড়াটে লোকজন তাকে মারধর করে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, সহিদুল তাকে দিয়ে জোরপূর্বক অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও ধারণ করে, যেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছে। এসব ভিডিও ধারণ করে সহায়তা করেছে গোদাড়ার সোহাগ নামের এক ব্যক্তি। সহিদুল তাকে জোর করে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
শাহানারা জানান, “আমার পাঁচ মেয়েরই বিয়ে হয়েছে। তার কর্মকাণ্ডে তাদের সংসারেও অশান্তি নেমে এসেছে।” সহিদুলের অন্যায় আবদার না মানায় তাকে একবার মারধর করে ডান পা ভেঙে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শাহানারার দাবি, সহিদুল একজন নারীলোভী ও সুদখোর ব্যক্তি। তাকে বাদ দিয়ে আরও তিনটি বিবাহ করেছে সে এবং এলাকায় একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত। তার অত্যাচারে অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
আর্থিকভাবে নিঃস্ব করতেও উঠে পড়ে লেগেছেন সহিদুল। শাহানারা অভিযোগ করেন, রূপালী ব্যাংক নওয়াবেঁক শাখার তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের (নং: ১৩২৪৮) তিনটি চেকের পেছন পাতা চুরি করে সহিদুল, যার একটি (নং: ৯৯৪৬৫৩৯) চেকে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা লিখে ডিজঅনার করেছে এবং এখন মামলার হুমকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় তিনি শ্যামনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
শুধু তাই নয়, সহিদুল তার ফারাজের ৫ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। বাধা দিতে গেলে ছোট ভাই ডাবলুসহ তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক পরিচয় বদল করে সহিদুল বিভিন্ন সময় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিচ্ছেন বলেও দাবি করেন শাহানারা। একসময় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হলেও বর্তমানে তিনি আটুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম মোড়লের ছত্রছায়ায় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। ফলে, থানায় একাধিক অভিযোগ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ শাহানারার।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ অংশে তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “আমি আর কোনো নিরীহ মানুষকে তার ফাঁদে পড়তে দিতে চাই না। আমি আমার ও আমার পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমি প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”