গ্রাম-গঞ্জ-শহর
জঙ্গী নাটকে ৩০ বছরের সাজায় জেল খাটছে খুবির দুই ছাত্র মুক্তি দাবি
দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও অধিক সময় ধরে জঙ্গী সন্দেহে কারাবন্দী রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মাদ অনিক এবং পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের ১৭ ব্যাচের মো. মোজাহিদুল ইসলাম রাফি।
Printed Edition
দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও অধিক সময় ধরে জঙ্গী সন্দেহে কারাবন্দী রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিনের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মাদ অনিক এবং পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের ১৭ ব্যাচের মো. মোজাহিদুল ইসলাম রাফি। তাদের মুক্তির দাবিতে রোববার খুবিতে সংবাদ সম্মেলন করে কারাবন্দীদের পরিবার ও সহপাঠী শিক্ষার্থীরা। জঙ্গী নাটক সাজিয়ে তাদের আটক, মামলা এবং সাজা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তাদের বিরুদ্ধে পরপর ৭টি মামলা দায়ের করা হয়। ইতোমধ্যে তিনটি মামলায় জামিন পেয়েছেন তারা। সোনাডাঙ্গা থানায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় ১০ বছর এবং খানজাহান আলী থানা কৃষকলীগ অফিসে হামলা মামলায় ২০ বছরের সাজা ভোগ করছেন। এ ছাড়া বাকি দু’টি মামলা চলমান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সহপাঠীরা বলেন, নূর মোহাম্মদ অনিক এবং মো. মোজাহিদুল ইসলাম রাফি ধর্ম সচেতন, সাধারণ গোছের, নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা নিজেদের খরচে চলতে শুরু থেকে রোজগারের চেষ্টায় রত ছিল। টিউশনি করাসহ আয় রোজগারের চেষ্টার অংশ হিসেবে ‘ফুডি ফ্যামিলি’ নামে ইসলামনগর রোড একটি খাবার রেস্তোরাঁ দেয়। এর আগে পরেও তারা নানা ব্যবসায়িক চিন্তা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছে। আমরা তাদের জীবনমুখী হিসেবেই পেয়েছি। তাদের মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়ামি কখনও ছিল না। ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী থাকাকালীন ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে আমরা জানতে পারি, বেশ অনেকটা সময় নূর মোহাম্মদ অনিক এবং মুজাহিদুল ইসলাম রাফিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা যে যার হল থেকে নিরুদ্দেশ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও কিছু বলছে না। পরে আমরা জানতে পারি তাদের দু’জনকে গল্লামারিস্থ হাসনাহেনা নামক বাড়ি থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ জঙ্গী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় জানতে পেরেছি যে, আটকের পর গুম অবস্থায় ওদের সঙ্গে অনেক অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। জোরপূর্বক জঙ্গীবাদে জড়িত থাকার স্বীকরোক্তি নেয়া হয়েছে।
তারা আরও বলেন, তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্যায়ভাবে ওদের ছাত্রত্ব স্থগিত করে। তাদেরকে কোনো রকমের আইনি সহযোগিতা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের মুক্তির বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে। পাশাপাশি তাদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, গত বছর সরকার পতনের পর ২৪ -এর সেপ্টেম্বর মাসে তিন দিন, ১০ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত দুই দফা নিজেদের মুক্তির দাবিতে অনশন করেছে তারা। কিন্তু তবুও মুক্তি মেলেনি। অবিলম্বে তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে জঙ্গী নাটকে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অনিকের স্ত্রী সুমাইয়া বলেন, সুদীর্ঘ ৫ বছর আমরা মামলা লড়তে লড়তে ক্লান্ত। ইতোমধ্যে ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছি। ৭টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় জামিন হয়েছে। ২ মামলায় এখনও শুনানির কথা থাকলেও ডেট পড়ছে না। গত সরকারের সাজানো মামলায় এতো মানুষের মুক্তি হলেও আমার স্বামীর হচ্ছে না। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই। তার সঙ্গে সংসার করাকালীন তার ভেতরে এমন অস্বাভাবিক কিছু কখনও দেখিনি।
আরেক ছাত্র রাফির পিতা বলেন, আমার ছেলে সাদামাটা নামাজি। তাকে আটকের পর আমরা তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। এমনকি সেই সময় আমাদের একটা সংবাদ সম্মেলনও করতে দেওয়া হয়নি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় এসময় রাফির বন্ধুদেরও হয়রানি করে প্রশাসন।
অনিকের শিক্ষক বলেন, অনিককে প্রথমে গুম করা হয় এবং কিছুদিন পর আটক দেখানো হয়। অনিক সব সময় পরিবার নিয়ে ভাবত। সে এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হতে পারে না।
কারাবন্দী শিক্ষার্থীদের আইনজীবী বেগম আক্তার জাহান রুকু বলেন, সন্ত্রাস দমন আইনে বড় বড় আসামীরা মুক্তি পেলেও তারা ছাড়া পায়নি। সাজা হওয়া দু’টি মামলায় আপিল শুনানির চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে ডেট পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।