খাদ্য পরিবহন নিয়ে খুলনায় ঠিকাদারদের সাথে ট্রাক শ্রমিকদের বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। বিরোধের অংশ হিসেবে ৩ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ছিল সড়ক পথের পণ্য পরিবহন। সর্বশেষ রোববার বিকেলে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের উপস্থিতিতে খুলনা খাদ্য পরিবহন(সড়ক পথ) ঠিকাদারদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের সাথে পৃথক বৈঠক শেষে সোমবার সকাল থেকে পণ্য খালাস শুরু হয়। কিন্তু এখনও প্রায় অর্ধশত জাহাজ, বার্জ চাল নিয়ে অপেক্ষায় আছে খুলনার ভৈরব নদে। সোমবার সকালে নগরীর ৬ নম্বর ঘাটের রুজভেল্ট জেটি এবং মহেশ্বরপাশা সিএসডি গোডাউনের জেটিতে গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। তবে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেছেন, যার যে দাবিই থাকুক না কেন, টেবিলে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। কোন প্রকার কাজ বন্ধ করে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করা হলে তার বার তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খুলনা খাদ্য পরিবহন (সড়ক পথ) ঠিকাদার সমিতির আহবায়ক এস এম আজিজুর রহমান স্বপন বলেন, খুলনাস্থ দু’টি সিএসডি এবং দু’টি ঘাটে খাদ্য দপ্তর বা খাদ্য পরিবহন ঠিকাদারদের অননুমোদিত কয়েকজন ব্যক্তি গাড়ি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ে ঘাট/সিএসডিতে ঠিকাদারদের বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া দিতে বাধ্য করে। এর ফলে খাদ্যপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি খরচ পড়ে। এজন্য তারা সরাসরি গাড়ি ভাড়া নিতে চান। কিন্তু বাধ সাধে ট্রাক শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। জয়েন্ট ট্রান্সপোর্টের নামে বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কিছু নেতা এমন বাড়তি অর্থ আদায় করছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। সার্বিক বিষয়টি জানিয়ে সমিতির পক্ষ থেকে গত ৬ এপ্রিল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তাতে বলা হয়, ট্রাক ভাড়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে ৩ এপ্রিল থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার সকাল থেকে নগরীর ৬ নম্বর রুজভেল্ট জেটি ঘাটে একটি জাহাজ থেকে খাদ্যপণ্য খালাস শুরু হয়েছে। কিন্তু মহেশ্বরপাশা সিএসডিতে কোন পরিবহন হচ্ছে না। তবে সেখানকার শ্রমিকরা জানান, রোববারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাতেই ২৩টি ট্রাক সিএসডিতে প্রবেশ করে রাখা হয়। যা থেকে মাত্র ১২টিতে পণ্য পরিবহন হয়েছে। বাকী ১১টি ট্রাকের জন্য তাদেরকে ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে। এজন্য তারা খাদ্য পরিবহন (সড়ক পথ) ঠিকাদার সমিতিকে দায়ী করেন।

ঠিকাদার সমিতির আহবায়ক এস এম আজিজুর রহমান স্বপন বলেন, রোববার আলোচনার পর একটি রেটচার্ট দেওয়া হলেও সেটি মানছেন না ট্রাক শ্রমিক ইউনয়নের নেতারা। এজন্য সংকট এখনও পরিপূর্ণভাবে সমাধান হয়নি।

সব মিলিয়ে ঠিকাদার-শ্রমিক বিরোধের ফলে খুলনার ভৈরব নদে যেমন অর্ধ শতাধিক জাহাজ, বার্জ চাল খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে তেমনি ওই জাহাজগুলো আবারো মোংলায় গিয়ে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য আনতে না পারায় সেখানেও চারটি জাহার খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, দু’টি মাদার ভেসেল ইতোমধ্যে খালি হয়েছে। তবে খুলনার দু’টি সিএসডি থেকে পণ্য খালাস না হলে সংকট বাড়তে পারে বলে তিনিও আশংকা করছেন।

উল্লেখ্য, খুলনার এ দু’টি ঘাট থেকে পণ্য খালাস করে সেগুলো খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বিভিন্ন সিএসডিতে নেওয়া হয়। এগুলো ওএমএস, টিসিবি ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার রেশনের চাল বলেও সূত্রটি জানায়। যা খালাস করে ট্রাকযোগে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে সরকারী গোডাউনে মজুদ রাখার পাশাপাশি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু চারদিনের খালাস বন্ধ থাকায় বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন চাল নদীতে বিভিন্ন জাহাজে অপেক্ষমান রয়েছে। দ্রুত এর সমাধান না হলে খুলনাঞ্চলে চরম চাল সংকট দেখা দিতে পারে বলেও আশংকা সংশ্লিষ্টদের।