নীলফামারী সংবাদদাতা : আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে ফিরে আসার সুযোগ নেই, খুনি হাসিনার ফিরে আসার সুযোগ নেই, আসলে একটা কারণে আসবে সেটা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর জন্য। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি আজ সোমবার নীলফামারী জেলার ৬ টি উপজেলা সফরের প্রথমভাগে ডোমার উপজেলার বাস স্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত এক পথসভায় এ মন্তব্য করেন।

খুনি হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাজারের ও উপর মায়ের বুক খালি করেছে দাবী করে বলেন, ওই খুনির বিচার বাংলাদেশে হওয়া উচিত, ওই খুনির বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের জায়গা থেকে যেন চিন্তা না করে অন্য কারো হাতে দায়িত্ব দিয়ে চলে যাবে। আমরা এই বাংলাদেশে ওই খুনির বিচার দেখতে চাই। আমরা এই বাংলাদেশে যে আশাগুলোকে সামনে রেখে এত যে তরুণ রক্ত দিল সেই সিস্টেমগুলোকে সংস্কার দেখতে চাই।

তিনি আরো বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভাজন তৈরী করে এমন কোন অযৌত্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক কথা যেন না বলি। এখন সরকারে যারা আছে তারা সরাসরি কোন দলের প্রতিনিধি না। তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শক্রমে তারা সরকারে জায়গা করে নিয়েছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন দ্রুত দিতে হবে এটা কথা হতে পারে না, বরং কথা এটা হতে পারে যে, নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হওয়ার জন্য সামগ্রিক প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে বিচার এবং সংস্কার শেষে নির্বাচন হতে হবে।

বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্য সম্পর্কে বলেন, আমরা দেখেছি আগে এমপিরা টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনত। তারা দলীয় প্রভাবে নির্বাচিত হতো এবং জনগণের কথা চিন্তা না করে তার উপরে যে নেতা- তাকে তেল দিতে ও মেইনটেন করতে তার দিন যেত। কিন্তু জনগণের দিকে খেয়াল করার সময় পায় নি। এসব নেতারা নির্বাচনের আগে জনগণের পকেটে ৫০০/১০০০ টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে জনগণকে প্ররোচিত করত এবং নির্বাচনের পরে সকল সেবায় ও সুযোগ সুবিধা দেয়ার নামে হাজার হাজার টাকা জনগণের পকেট থেকে নিয়েছে। তিনি আগামী নির্বাচনে দল মত না দেখে ভাল মানুষকে নির্বাচিত করে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার করার আহ্বান জানান। ভাল মানুষকে ভাল এবং খারাপ মানুষ খারাপ বলার মানসিকতা নিয়ে খারাপ মানুষকে ছুড়ে ফেলতে হবে। তা না হলে আওয়ামী লীগ আমলের মত রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি শুরু হবে বলে আশংকা করেন। তিনি নারী সমাজকে জাতির অর্ধেক অংশ হিসাবে ভাল মানুষ নির্বাচনে তাদের সমর্থন আশা করেন। সরকারী অফিসগুলো দুর্নীতি বিস্তার রোধে তিনি তাদের ব্যাপারে জনসম্মুখে প্রকাশ করার উদাত্ত আহ্বান জানান। সরকারী যত বড় আমলাই হোক জনগণকে ভয় দেখায়, অন্যায় করলে তারও বিচার দাবী করেন তিনি। বিগত সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়া হয়েছে, অথচ ওটাই ছিল দুর্নীতি’র আখড়া।

বিগত সময়ে হাসিনা রাজনৈতিক কালচার ধ্বংস করেছেন, খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছেন উল্লেখ করে কোন দলের নাম না নিয়ে তিনি বলেন, এখন দেখেছি একটি রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা একই ভাষা ব্যবহার করছেন। এটা কোন রাজনৈতিক ভাষা হতে পারে না বলে তিনি দাবী করেন। যে ভাষায় এতদিন আপনাদের উপর জুলুম করা হয়েছে, সেই ভাষার চর্চা এখন শুরু করলে জনগণ তাদের ছুড়ে ফেলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আপনারা যদি ওই কালচার প্রয়োগ করেন, তাহলে আপনারা অন্য কারো দ্বারা ওই কালচারের শিকার হবেন, কিন্তু এই তরুণ প্রজন্ম এই কালচার আর সেট করতে দিবে না। তিনি এসব নেতাদের উদ্দেশে বলেন, কথা বলার সময় সাবধানে কথা বলবেন, আপনার ভাষা ঠিক করবে আপনি আমাদের মুরব্বী কিনা। আপনি আমাদের থেকে শ্রদ্ধা বা সম্মান পাবেন কিনা। আগামীর বাংলাদেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধা সম্পর্কের বাংলাদেশ বিনির্মাণে যোগ্য লোকের যোগ্য জায়গায় প্রতিষ্ঠা এবং ভালো’র সাথে থেকে খারাপকে তিরস্কারের আহ্বান জানান। এর আগে তিনি উপজেলা শহরে বৃষ্টিতে ভিজে গণসংযোগ করেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক, সারোয়ার তুষার, ড. আতিক মুজাহিদ, আলী নাছের খান, সাদিয়া ফারজানা দিনা, আসাদুল¬াহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিওন প্রমুখ।