বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। আর সেই সুন্দরবন সুরক্ষায় প্রতি ৭ বর্গ কিলোমিটার বন পাহারায় একজন বনরক্ষী। নেই পর্যাপ্ত জনবল। বিশাল এই বনের জনবল সংকট নিরসনের দাবি বনরক্ষীদের। দেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে বৃহত্তর প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ‘সুন্দরবন। এ বনের প্রধান উদ্ভিদ ‘সুন্দরী। এই সুন্দরী গাছের জন্য এই বনের নাম হয়েছে ‘সুন্দরবন। ‘সুন্দরী গাছের জন্য বিশ্ববাসীর কাছে এই বন বিখ্যাত। সেই ‘সুন্দরীথ গাছ ও বন সংরক্ষণের জন্য যে সংখ্যক বন প্রহরী রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। ম্যানগ্রোভ এ বনের প্রতি ৭ বর্গ কিলোমিটার পাহারা দিতে হয় একজন বন প্রহরীকে। আর এই বন পাহারা দেয়া একজন বন প্রহরীর পক্ষে মোটেও তা সম্ভব নয়। সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশের মোট আয়তন ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের আয়তন ২৪৩০ বর্গ কিলোমিটার। খুলনা পশ্চিমের আয়তন ৩৫৮৭ বর্গ কিলোমিটার।

খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার কয়রা,দাকোপ, শ্যামনগর উপজেলা ঘিরে পশ্চিম বিভাগে রয়েয়ে দুটি রেঞ্জ। এ দুটি রেঞ্জে রয়েছে ৯ টি স্টেশন ৩১ টি ফাঁড়ি। এখানে ৫১২ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৩২৯ জন।

অপরদিকে বাগেরহাট জেলার তিন উপজেলা শরনখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মংলা সংলগ্ন পূর্ব সুন্দরবনকে শরনখোলা ও চাদঁপাই দুটি রেঞ্জে বিভক্ত করা হয়েছে। এই রেঞ্জের অধীনে ৮টি ষ্টেশন ও ৩০টি ক্যাম্প ও ফাঁড়ি রয়েছে। ২৪৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বন পাহারায় রয়েছে মাত্র ৩৫০ জন বনরক্ষী। যেখানে পদ রয়েছে ৫১৬ টি। শুধু জনবল সংকট নই রয়েছে অত্যাধুনিক জলযান সংকট। বর্তমানে যা আছে তা চলাচলের অযোগ্য হলেও তাই দিয়েই কাজ সারতে হচ্ছে তাদের। বনরক্ষীদের দাবি। বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার ও হরিণ শিকারীদের খোঁজ পেলে আমরা যেতে যেতে তারা পালিয়ে যায় যার অন্যতম কারণ হচ্ছে জলযান। জলযান উন্নতমানের ও দ্রুত গতির হলে হরিণ ও বিশ প্রয়োগে মাছ শিকারীদের ধরতে সুবিধা হবে।

খুলনা রেঞ্জের নলিয়ান স্টেশন কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সুন্দরবন অনেক বড় এরিয়া আর প্রতি ৭ বর্গকিলোমিটারে একজন বনরক্ষী পাহারা দেওয়াটা অনেক সমস্যার। সুন্দরবনে জনবল সংকট থাকায় রক্ষীদের পাহারা দিতে সমস্যা হয়। জনবল সংকট নিরসন হলে বনের সুরক্ষা বাড়বে। আর সেই সাথে আমাদের জলযানগুলো চলাচলের অনুপযোগী। উন্নতমানের জলযান পেলে আমরা অনেকটাই উপকৃত হবো।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বন প্রহরী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, একজন বন রক্ষীর পক্ষে ৭ বর্গকিলোমিটার বন পাহারা দেওয়া সম্ভব না। ইতোপূর্বে স্থানীয় বন বিভাগের পক্ষ থেকে জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা হয়েছে। আর সুন্দরবনে যে জলযান রয়েছে এগুলো পর্যাপ্ত নই। এই জলযানগুলো অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। এর ভিতরে অনেক জলযান ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আধুনিক জলযানের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।