গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাসায় রহিমা বেগম (৩২) নামে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। একই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় তার স্বামী ইমরান হোসেন (৩৮) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) গভীর রাতে ‘একতা ভিলা' নামে ওই আবাসিক ভবনের পঞ্চম তলায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত রহিমা বেগমের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলার বিনুটিয়া গ্রামে। সাত বছর আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি দ্বিতীয় স্বামী ইমরানের সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করেন। দুই সপ্তাহ আগে তারা কোনাবাড়ীর নোয়াব আলী মার্কেট এলাকার ‘একতা ভিলা'র পঞ্চম তলায় ভাড়া নেন। তাদের সঙ্গে ছিল প্রথম সংসারের মেয়ে শারমিন (১৬)। একই ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকতেন বুলেট, রাজিব এবং তানিয়া নামে তিনজন যুবক-যুবতী, যারা টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমে একটিভ ছিলেন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে শারীরিক ও মানসিক টানাপোড়েনের এক পর্যায়ে ইমরান তার স্ত্রী রহিমার গলা কেটে হত্যা করেন বলে দাবি করেছে তাদের মেয়ে শারমিন। এসময় তিনি ঘটনাটি দেখে চিৎকার করলে ইমরান তাকে পাশের রুমে আটকে দেন। পরে শারমিন তার মামা মোঃ জুয়েলকে ফোন করে বিষয়টি জানান। জুয়েল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ ও আহত ইমরানকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ এসে রহিমার লাশ উদ্ধার করে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ইমরানকে দ্রুত গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার পর সাবলেট থাকা তিন যুবক-যুবতী নিখোঁজ রয়েছে।
কোনাবাড়ী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার সময় বাড়িতে থাকা মেয়ে শারমিনই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। ইমরান পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছে। সাবলেট থাকা তিনজনের অবস্থানও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অধিকতর তদন্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (অপরাধ-উত্তর) রবিউল হাসান বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের আসল কারণ উদঘাটনে প্রযুক্তি ও তথ্যভিত্তিক তদন্ত চলছে। ঘটনার মোটিভসহ অন্যান্য জটিল দিকগুলো খতিয়ে দেখতে পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে। খুব দ্রুতই আমরা সমস্ত রহস্য উন্মোচন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।
কোনাবাড়ী থানার এসআই পাপন হোসেন জানান, নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি এবং প্রমাণ সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
এ হত্যাকাণ্ডে এলাকায় চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। স্থানীয়দের দাবী, সাবলেট থাকা তিনজনের আচরণ সন্দেহজনক ছিল। পুলিশ বলছে, তদন্তে তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।