বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, যিনি রাসুল (সা.) কে ভালোবাসেন না, আল্লাহ তায়ালা তাকে ভালোবাসেন না। মুহাম্মদ (সা.) এর শিক্ষা হচ্ছে জালেমকে প্রতিহত করতে হবে। আমরা নিজেরা জুলুম করবো না এবং কাউকে জুলুম করতে দেবো না। রাসুল (সা.) যুবকদের তৈরি করেছেন এবং দল তৈরি করেছেন জালেমদের প্রতিহত করার জন্য। তাই সমাজ থেকে জুলুমকে উৎখাত করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রোববার চট্টগ্রামের জি. ই. সি কনভেশন হলে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের সীরাতুন্নবী(সা.) মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর আইন মেনে চলতে হবে এবং প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম করতে হবে, ইসলাম কায়েম করার জন্য জামায়াতবদ্ধ হতে হবে। আল-কোরআনের আলো কেবল নিজের ঘরে নয়, সংসদেও জ্বালাতে হবে। সর্বপ্রথম সংবিধান রচনা করেছেন মুহাম্মদ রাসুল(সা.)। আমাদের কোরআনকে বুঝে পড়তে হবে। শুধু খতম পড়ার জন্য কোরআন নাজিল হয়নি। কোরআনকে বুঝে সে অনুযায়ী আমাদের চরিত্র গঠন করতে হবে। যে ব্যক্তি কোরআন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে তার জীবন সংকীর্ণ হবে। ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে রাসুল(স.)কে জেলে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশে ইতিহাসে ৫৪ বছরে জাতীয় সংসদে কোরআনের আইন চালু হয় না। সে সংসদ আমরা মানি না। জুলাই বিপ্লবের ছাত্রদের দাবি জাস্টিস প্রতিষ্ঠিত হলে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। আগামীতে সংসদকে আল্লাহর আইন দিয়ে পরিচালিত করতে হবে। ফ্যাসিস্টরা বিদায় হয়েছে এবং তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সোচ্চার থাকতে হবে। আজকে ফিলিস্তিনে নিষ্পাপ শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। অথচ বিশ্ববিবেক নিরব। তাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

মাহফিলে প্রধান ওয়ায়েজ ছিলেন- নাগাইশ দরবার শরীফের পীর সাহেব কুমিল্লা, অধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তাক আহমদ ফয়েজী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, বিশেষ ওয়ায়েজ হিসেবে আলোচনা পেশ করেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর প্রফেসর ড. বি. এম মফিজুর রহমান আযহারি।

প্রধান ওয়ায়েজীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তাক আহমদ ফয়েজী বলেন- দুনিয়াতে মানুষকে সৃষ্টি করে এমনিতে ছেড়ে দেননি। আল্লাহ তায়ালা এই বান্দা গুলোকে হেদায়েত করার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসুল প্রেরণ করেন। এই ধারাবাহিকতায় আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহর একাত্ববাদ ঘোষণা করার জন্য।

তিনি বলেন, এদেশ ১৯০ বছর ইংরেজরা শাসন করেছে। এর পর তারা আমাদেরকে ভাগ করে গেছেন, আমরা ১৯৭১ সালে এই দেশ যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন করেছি। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর, কিন্তু দেশ এখনো শোষণ ও জুলুমের শিকার হচ্ছে জনগণ। সেই ইংরেজদের মতোই স্বৈরাচারী শাসন চালানো হচ্ছে, কিন্তু দেশে জনগণ এই স্বৈরাচরের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল। তাই এদেশ থেকে স্বৈরাচার পালাতে বাধ্য হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেন, আমাদের লালন-পালনকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। দুনিয়াতে আমাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। দুনিয়া চিরস্থায়ী জায়গা নয়, সকলকে মাটির নিচে কবরে চলে যেতে হবে। আর আল্লাহ তায়ালা হাশরের দিন বান্দার সরিষা পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তার প্রতিদান দিয়ে দেবেন।

তিনি বলেন, প্রত্যেক যুগে আল্লাহ তায়ালা নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন, যাতে পৃথিবীতে বান্দারা মুক্তির পথ পেতে পারেন। আর সকল নবী-রাসূলের মধ্যে সর্বশেষ নবী হচ্ছেন মুহাম্মদ (সা.)। আর আল্লাহর রাসূলের জীবন হচ্ছে কোরআন। আমরা যে কোরআন পড়ি তার বাস্তব ছবি হচ্ছে মুহাম্মদ (সা.)। আমরা সত্যিকার অর্থে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে চাই, তাহলে রাসুল (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহর নবী যেভাবে কোরআনকে অনুসরণ করতে বলেছেন সেভাবে অনুসরণ করবো। রাসুল (সা.) তার সাহাবীদের কোরআনের আলোকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, আমরাও তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার চেষ্টা করে যেতে হবে। দেশে কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করার জন্য জামায়াতে ইসলামী গ্রামে গ্রামে মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করছে। আমাদেরকে কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা জীবন দিয়ে আল্লাহর দেওয়া জীবন বিধান কায়েম করতে চাই। দেশের জনগণ সব মতবাদ দেখেছে এবার ইসলামকে দেখতে চায়, কোরআনের আইন চায়। আমরা সকলে আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা শাহজাহান বলেন, কোরআনের আদর্শ ছাড়া উত্তম সমাজ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, তাই আমাদেরকে ইসলামের সুমহান আদর্শ চর্চার মাধ্যমে সুন্দর জীবন গঠনের জন্য কাজ করে যেতে হবে এবং আদর্শিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামের দাওয়াতকে সকল মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার আহবান জানান।

শাহজাহান চৌধুরী বলেন- শহীদ আল্লামা সাইদীর ফাঁিসর রায় শুনে দেশের ২০০ মানুষ জীবন দিয়েছে। তিনি বলেন- এই দেশ উন্নত ও সম্বৃদ্ধশালী বানাতে চাই, তাহলে এই দেশে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে হবে। এই মাহফিলেে থকে চট্টগ্রামের মানুষকে জানাতে চাই, আমরা আর আকিদার ঠেলাঠেলি চাই না, সব ভেদাভেদ ভুলে আগামীতে ইসলামের বাংলাদেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাঁিস দিয়েছেন, প্রতীক ফেরত পেলাম, নিবন্ধন ফেরত পেলাম, প্রিয় নেতা এটি এম আজহারুল ইসলামকে ফিরে পেয়েছি। আমাদেরকে সুন্নতে রাসুলের ওপর অটল থাকতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দদের আরও বেশি কোরআন ও হাদিসের ওপর অটল থাকতে হবে। আমাদের হালাল- হারামের পার্থক্য করে চলতে হবে। তাহলে আগামী দিনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে একটি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সিরাতের আলোচনা করে কিয়ামত পর্যন্ত শেষ করা যাবে না। রাসুল (সা.) এর আলোচনা সব সময় আমাদেরকে করতে হবে, বুঝার চেষ্টা করতে হবে এবং এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তাঁর রেখে যাওয়া শিক্ষার আলোকে আমাদেরকে সারা জীবন চলতে হবে।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, ডা. আবু নাসের, নগর কর্মপরিষদ সদস্য, ডা. মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, ড. মাহবুবুর রহমান, হামেদ হাসান ইলাহী, প্রফেসর সাইফুল্লাহ, আমির হোছাইন, মাহমুদুল আলম, ফখরে জাহান সিরাজী প্রমুখ।

জামায়াতের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে শ্রমিকরা

জোরালো ভূমিকা পালন করবেন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী একদল সৎ দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, জামায়াতের প্রার্থীরা একদিকে যেমন সৎ দক্ষ ও খোদাভীরু অন্যদিকে শ্রমিক বান্ধব। আমরা বিশ্বাস করি এই সকল প্রার্থীদের বিজয়ী করতে শ্রমিকরা মাঠে ময়দানে জোরালো ভূমিকা পালন করবে।

তিনি গতকাল সোমবার বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত দায়িত্বশীল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও নগর ভারপ্রাপ্ত আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ইসলাম শ্রমজীবী মানুষকে এক অনন্য সম্মানে ভূষিত করেছে। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) নিজের শ্রমিক ছিলেন এবং শ্রমিকদের সবচেয়ে আপনজন ছিলেন। তিনি বলেছেন, শ্রমিকরা আল্লাহর বন্ধু। শ্রমিকদের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে তিনি তাদের মজুরি পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে আমাদের নবী কঠুরি আঘাতে জর্জরিত শ্রমিকের হাতে চুমু খেয়েছেন। তিনি বলেছেন শ্রমিকদের হাশর হবে তার সাথে এবং শ্রমিকরা ৫০০ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসুল (সা.) এভাবে শ্রমিকদের সম্মানিত করেছেন।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নজির হোসেন, মকবুল আহমেদ ভূঁইয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শিহাব উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, কোষাধক্ষ্য মো. নুরুন্নবী, দপ্তর সম্পাদক স ম শামীম , ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক মাওলানা জাহাঙ্গির আলম, পাঠাগার সম্পাদক ইন্জি সাইফুল ইসলাম, সহ-প্রচার সম্পাদক আবদুর রহীম মানিক প্রমুখ।

বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন চট্টগ্রামের শিক্ষক প্রতিনিধি সমাবেশ

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আদর্শ মানেই ইসলাম। তাই একটি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত শিক্ষক প্রতিনিধি সমাবেশে প্রধান অতিথি বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, একজন আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকাই পারে একটি আদর্শ জাতি গঠনে পথ দেখাতে। তারা শিক্ষকদের আত্মশুদ্ধি, দায়িত্ববোধ এবং ইসলামি মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত থেকে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

চট্টগ্রাম নগরীর একটি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ নুরুন্নবীর সভাপতিত্বে ও আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সালেহ আকাশ এর সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি লুৎফর রহমান, উত্তর জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ নুরুন্নবী ও দক্ষিণ জেলা সভাপতি মওলানা মোঃ ইসমাইল হাক্কানী, মহানগরী সেক্রেটারি ড. আ.ম.ম মসরুর হোসেন প্রমুখ।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিক হলে বাংলাদেশের পুরা রাষ্ট্র ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। তাই এই বিষয়ে শিক্ষক সমাজকে সজাক থাকতে হবে। তিনি আশ্বস্ত করেন বাংলাদেশ ইসলামী সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার কাজ শুরু করবে।

অনুষ্ঠানে শুরুতে দারসুল কুরআন পেশ করেন মাওলানা মাহবুবুর রহমান। পরিশেষে মহানগর সভাপতি অধ্যাপক নুরুন্নবীর সমাপনী বক্তব্যের মধ্যমে সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করেন।