বিদেশে বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন, কনস্যুলেট, কূটনীতিকদের অফিস ও বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিদেশি কয়েকটি মিশন সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিদেশি কয়েকটি মিশন সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো লিখিত নির্দেশ দেয়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে মৌখিক নির্দেশ ছিল বলে কূটনৈতিক সূত্রের দাবি। কূটনৈতিক সূত্রের ভাষ্য, গত কয়েক মাস ধরে জিরো পোর্ট্রেট নীতি বা কোনো ছবি না রাখার সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হয়েছে। সেই নীতি অনুসরণ করতেই সরানো হচ্ছে রাষ্ট্রপতির ছবি। এদিকে বিদেশের মিশনগুলো থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর ব্যাপারে বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি বলে দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানান তিনি। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না এটি কোনো রাজনৈতিক দলের বক্তব্য। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদেশে অবস্থানরত এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক গণমাধ্যমকে জানান-আমি বলতে পারি সদর দপ্তর থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা ছিল না। তবে ইঙ্গিতটা বোঝার দরকার আছে। এ বিষয়ে দুটি দিক রয়েছ- ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সরানো হয়েছিল। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মিশনপ্রধানদের নিয়ে অনলাইনে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। যখন আমরা দেখি মন্ত্রণালয়ে কোনো ছবি নেই, তখন সেটা সংকেত দেয়। তাই রাষ্ট্রপতির ছবিও কয়েক মাস আগেই সরানো হয়েছিল। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তার ধারণা অধিকাংশ মিশন কয়েক মাস আগে থেকেই একই ‘জিরো পোর্ট্রেট নীতি’ অনুসরণ করেছে।
এদিকে মিশনগুলোর কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এ নির্দেশনা কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি বা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়নি। বরং টেলিফোনে অঞ্চলভিত্তিক কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পরে ওই কূটনীতিকদের অন্য মিশনগুলোতে খবরটি পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারকে কূটনৈতিক মিশন, কনস্যুলেট, কূটনীতিকদের অফিস ও বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়া প্যাসিফিক, আফ্রিকা ও ইউরোপের কয়েকটি মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে-এখনো অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের নির্দেশ পাননি। তবে অন্তত দুটি মিশনের প্রধান নিশ্চিত করেছেন যে তারা সরকারের কাছ থেকে এমন বার্তা পেয়েছেন।
বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা থেকে ফোনে আমাদের জানানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির ছবি সরাতে হবে। এটি লিখিতভাবে আসেনি, তবে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অন্য মিশনগুলোতেও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার। একই সঙ্গে তদারকির দায়িত্বও থাকবে।
আরেকজন কূটনীতিক জানান, তাদের অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সরাসরি জানালেও কাছাকাছি আরেকটি মিশনের মাধ্যমে বার্তাটি তাদের কাছে পৌঁছেছে। জানা গেছে, ছবি সরানোর বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি বা ই-মেইল না দিলেও টেলিফোনে অঞ্চলভিত্তিক কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে এই নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার তথ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত দূতদের অন্যান্য মিশনে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এদিকে এখনো দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের কয়েকটি মিশন এই নির্দেশনা পায়নি। তবে বিদেশের দুটি মিশনপ্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, অন্যান্য মিশনকে অবহিত করার পাশাপাশি ছবি সরানোর বিষয়টিও তদারকি করবেন তারা।