ফেনী সংবাদদাতা : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, যারা ৫৪ বছর দেশ শাসন করেছেন তারা শুধু নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। দেশবাসী ৫৪ বছরে স্বাধীনতা পায়নি কারণ তারা দেশের থেকে ভিন দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছে। এদেশকে আর বিদেশের তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে দেয়া হবেনা। তিনি বলেন, পিআর পদ্বতিতে নির্বাচন হলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ তৈরি হবেনা। জবাবদিহী মূলক সরকার কায়েম হবে। একটি সুন্দর দেশ গঠন হবে। জবাবদিহিতার অভাবেই ফ্যাসিবাদ তৈরী হয়। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হ্রাস পাবে এবং সংলাপের সংস্কৃতি সৃষ্টি হবে। তাছাড়া প্রতিটি ভোটের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হবে। সকল দল মতের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার তৈরি হবে।

তিনি গতকাল বুধবার বিকেলে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, ফেনীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এবং ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেনী জেলা শাখা আয়োজিত গনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি বলেন, ক্ষমতা প্রেমীদের বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফেনী জেলা সভাপতি গাজী এনামুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি একরামুল হক ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আয়োজিত সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই আরও বলেন, ৫ আগস্টের পরে দেশ গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন বলে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সেই সংস্কার হতে হবে রাষ্ট্রের কাঠামোতে আইনে এবং রাজনৈতিক দলের চরিত্র ও সংস্কৃতিতে। রাষ্ট্রের কাঠামো, আইনের সংস্কারের কাজে কিছুটা অগ্রগতি হলেও রাজনৈতিক চরিত্র ও সংস্কৃতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে নাই। চাঁদাবাজি কোন অর্থেই কমে নাই বরং বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ত্রাসও কমে নাই বরং রাজনৈতিক পরিচয়ে ধর্ষণের মত ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিরপুর হাসপাতালের সামনে যে বর্বরতায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রতিবাদে জনতা ফুঁসে উঠেছে স্বাভাবিক কারণে।

জনতার সেই প্রতিবাদকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে বর্বর সেই হত্যাকান্ড আড়াল করে ফেলা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে মানুষ এই ধরনের রাজনীতি দেখতে চায় না। এই ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের একটি বড় অংশ বিএনপি'র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বিএনপি থেকে তাদের বহিষ্কারের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত। তাই বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বলব, কর্মীদের অপরাধের দায়ভার দল হিসেবে আপনাদের বহন করতেই হবে। চাঁদাবাজরা বিএনপির সাথে সম্পৃক্ততা রেখেই জনতার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। তাই জনতার ক্ষোভ বিএনপি'র প্রতি হবে এটা স্বাভাবিক। জনতার এই প্রতিবাদকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে দলের ভেতরে থাকা অপরাধীদের চিহ্নিত করুন। অপরাধ ঘটার আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।

পীর সাহেব ফেনীবাসীর দূর্ভোগ প্রসঙ্গে বলেন, বন্যা, নদী ভাঙ্গন ফেনীর মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। টেকসই বাঁধ নির্মাণে ব্যর্থতাই এর একমাত্র কারণ। তাই অনতিবিলম্বে পরশুরাম ফুলগাজীতে নদীসমূহে টেকসই বাঁধ নির্মাণ, ফেনী শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকায়ণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করার জোর দাবী জানাচ্ছি।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, জামায়াতের ফেনী জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মুফতি আবদুল হান্নান, হেফাজতে ইসলামের জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা ইসমাইল হায়দার, সেক্রেটারি মাওলানা ওমর ফারুক, জাহিদুল ইসলাম সৈকত, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক, শাহীন সুলতানি, এবি পার্টির নেতা, ইসলামী আন্দোলন কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা নুরুল করিম আকরাম, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মোঃ জয়নাল আবেদীন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ ইউছুফ আহমদ মনছুর, চট্রগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী আতিকুর রহমান মুজাহিদ। এছাড়াও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এতে বক্তব্য রাখেন।

মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক দস্যুতা জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আমাদের সন্তানরা বিপ্লব করেছিল। সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতির আমুল সংস্কার করতে হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে হবে। প্রতিহিংসা দূর হবে এমন প্রত্যাশা ছিল সবার। কিন্তু ক্ষমতা লোভী কিছু মানুষ ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করায় সুস্থ রাজনীতির প্রত্যাশা আজ ফিকে হয়ে গেছে। সোহাগ হত্যা তারই একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক ইস্যুতে আমরা কোনভাবেই ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছি না।

জুলাই ২৪ এর বিপ্লব ছিল নতুন বাংলাদেশ আবিষ্কার। বিপ্লবীদের স্লোগান ছিল 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'। ইমাম খতিবদের জুমার খুতবা ছিল ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। আমরা আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক বাক্সে ভোটের মাধ্যমে সেই কাক্সিক্ষত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব, ইনশাআল্লাহ।

জেলা জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা ফেনীবাসী ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকবো। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল ইসলামী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে নতুবা ইনসাফভিত্তিক একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

পিআরের পক্ষে জনমত তৈরিতে পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা

জুলাইয়ের উৎসর্গিত জীবন-রক্তের দাবি পূরণে

পিআর পদ্ধতিতেই আগামী নির্বাচন হতে হবে

- চরমোনাই পীর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই গত মঙ্গলবার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নিয়মিত বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে বলেন, গত বছরের জুলাই আগস্টে ছাত্র-জনতা যে জীবন ও রক্ত উৎসর্গ করেছে তা কেবলই হাসিনার উৎখাতের জন্য না বরং বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের পুনরাবৃত্তি রোধ করার তীব্র আকাক্সক্ষ থেকেই জনতা রাজপথে এসেছিলো। কিন্তু অবস্থার প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ যেনো সেই পুরোনো তিমিরেই ফিরে যাচ্ছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তা হতে দিতে পারে না। তাই আমরা স্বৈরতন্ত্র রোধের পরীক্ষিত ও কার্যকর পন্থা হিসেবে পিআর পদ্ধতিতে আগামী নির্বাচন আয়োজনের দাবীতে রাজপথে পুনরায় অবস্থান গ্রহণ করবো। কেননা তরুণ শিক্ষার্থীদের রক্তকে কোন রাজনৈতিক দলের লোভের কারণে ব্যর্থ হতে দেয়া যায় না। তারই অংশ হিসেবে আগামী ১ লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্ব পর্যন্ত দেশের সকল জেলায় গণসমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে এবং ঢাকার প্রতি থানায় থানায় গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে; ইনশাআল্লাহ। একই সাথে পিআরের পক্ষে জনমতকে আরো জোড়ালো করতে প্রচার সামগ্রী বিতরণ করা হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আদায়ে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা নির্বাচন চাই কিন্তু নির্বাচনের নামে স্বৈরতন্ত্র সহায়ক পুরোনো বন্দোবস্ত ফিরে আসুক তা চাই না। সেজন্য রাজপথের পাশাপাশি সব ধরণের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ক্রমান্বয়ে আরো কঠোর কর্মসূচির দিকে অগ্রসর হতেও পিছপা হবে না ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাই সরকারকে আহবান জানাবো, নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে এজেন্ডা তুলুন এবং গণভোট দিন। যারা পিআরের বিরোধিতা করছেন তারা তো মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। তাই জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। কোন দল বিশেষের কাছে নতিস্বীকার করে দেশকে অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিবেন না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ৫৫/বি পুরানা পল্টনে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা মুসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, যুগ্ম-মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, কে এম আতিকুর রহমান, দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ শোয়াইব হোসেন, কৃষি ও শ্রম বিষয়ক সম্পাদক্ব আব্দুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আতিকুর রহমান মুজাহিদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ মকবুল হোসাইন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী দেলাওয়ার হোসেন সাকী, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী মোস্তফা কামাল, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী শেখ মুহাম্মদ নুরুন্নবী, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম রুহুল আমীন, ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আরিফুল ইসলাম, সহ-প্রচার ও দাওয়াহ্ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুফতি মানসুর আহমাদ সাকী, কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি রেজাউল করীম আববার, সদস্য মাওলানা শামসুদ্দোহা আশরাফী। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।