স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর: গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সাবিনা আক্তার (২৮) নামে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ সহকর্মী শ্রমিক ও স্থানীয়রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাধে, এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

নিহত সাবিনা আক্তার ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার খালসাইদ ফুনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গাজীপুরের গোল্ডেন রিপিট নামের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। স্থানীয়রা জানান, ইফতারের পরও কারখানাটি খোলা থাকায় সাবিনা ইফতার শেষে বাসা থেকে কারখানার উদ্দেশ্যে বের হন। মহাসড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি মাইক্রোবাস তাকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে পথেই তার মৃত্যু হয়।

নারী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সহকর্মী শ্রমিক ও স্থানীয়রা বিক্ষোভ শুরু করে এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। তারা দ্রুতগতির যানবাহনের লাগাম টেনে ধরার দাবি জানায়। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিক ও বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়, এতে অনেক যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।

পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। উত্তেজিত শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, "শ্রমিক নিয়ন্ত্রণের সময় কিছু বহিরাগত সুযোগ নিয়ে কারখানায় ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে এবং এক ঘণ্টার মধ্যে যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়।"

ঘটনার জেরে মহাসড়কে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় অসংখ্য যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। অনেকে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা দ্রুতগতির যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। শ্রমিক নেতারা বলেন, "বারবার অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটলেও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না।"