খুলনা ব্যুরো, ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ইসলামী আন্দোলনের চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, অনেক ঝড়-ঝাপ্টা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে কত মঞ্জিল পার হয়েছেন মাওলানা আবু জাফর মোল্লা। তার দিকে তাকিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ ইসলামী আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। অনেকেই বলেছেন আমরা অভিবাবককে হারিয়েছি। সবর করি, হায় আল্লাহ এতো মানুষের স্বাক্ষী, এতো মানুষের সুধারণা যার প্রতি, তুমি তার প্রতি তোমার রহমত বর্ষণ করো। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন কোন মানুষের মৃত্যু হয়ে যায় তখন তার কাছ থেকে আমলগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন তিনটি আমল থাকে, একটি হলো সদকায়ে জারিয়া, অন্যটি উপকারি শিক্ষা এবং অপরটি নেক সন্তান-সন্ততি। তিনি বলেন, মাওলানা আবু জাফর মোল্লা একজন নিরঅহংকারী, সদালাপী, সাদাসিধে জীবন যাপনের অধিকারী মানুষ ছিলেন। ক্ষমতায় না থেকেও তিনি দল, মত, নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। আজকের জানাযার উপস্থিতি তার প্রমাণ। আমি এমপি থাকাকালীন সময়ে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। এ সময় আমার কাছ থেকে আপনাদের এলাকার উন্নয়নে তিনি সবসময় প্রেশানিতে থাকত। তিনি বলেন, ‘মাওলানা আবু জাফর মোল্লার ইন্তিকালে আমরা ইসলামী আন্দোলনের একজন নিবেদিত প্রাণ দাঈকে হারালাম। তিনি ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে।’ আজ তার বিদায়ের বেলায় আমাদের দোয়া ছাড়া দেবার আর কিছু নাই। মহান রব মাওলানা আবু জাফর মোল্লার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাদ আছর ডুমুরিয়া উপজেলার টোলনা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক স্কুল মাঠে উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর ও ধামালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানে মাওলানা আবু জাফর মোল্যার জানাজার পূর্ব আলোচনা তিনি এ সব কথা বলেন।

ধামালিয়া ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান, জামিরা বাজার পিপরাইল সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি ) মাদরাসার (অব.) শিক্ষক ও ডুমুরিয়া উপজেলার জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা আবু জাফর মোল্লা (৬৩) সোমবার সকাল ৯টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র ও এক কন্যা, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাওলানা আবু জাফর মোল্লা গত বুধবার ব্রেইন স্ট্রোক করে। প্রথমে তাকে খুলনার ডক্টরস পয়েন্টে এবং পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ^াস ত্যাগ করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তিনি ধামালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জামিরা বাজার পিপরাইল সিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসায় ১৯৭৯ সালে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০২২ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর রুকনিয়াতের শপথ নেন।

সোমবার বাদ আছর টোলনা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক স্কুল মাঠে জানাজায় ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার। জানাজায় কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, জেলা সভাপতি প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, খুলনা জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. ইউসুফ ফকির, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান ও মাওলানা গাজী সাইফুল্লাহ, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুর রশিদ, ফুলতলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা, নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, সেক্রেটারি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁন, বিএনপি নেতা শফি মোহাম্মদ খাঁন, খেলাফত মজলিস নেতা মুফতি আব্দুল কাইয়ুম জমাদ্দার, জামায়াত নেতা আমানুল্লাহ আমান, বি এম আলমগীর সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের হাজারো নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সেক্রেটারি জেনারেলের শোক : ডুমুরিয়া উপজেলার সাবেক আমীর ও ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবু জাফর মোল্লার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার। শোকবাণীতে তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে ক্ষমা ও রহম করুন। তার কবরকে প্রশস্ত করুন। তাঁর গুনাহখাতাগুলোকে ক্ষমা করে দিয়ে নেকিতে পরিণত করুন। কবর থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রত্যেকটি মঞ্জিলকে তাঁর জন্য সহজ, আরামদায়ক ও কল্যাণময় করে দিন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন এবং তাদের শোকাহত পরিবার-পরিজনদেরকে এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।’

খুলনা অঞ্চল জামায়াতের শোক : ডুমুরিয়া উপজেলার সাবেক আমীর ও ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবু জাফর মোল্লার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা অঞ্চল নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিদাতারা হলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, টিম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান খান, মাস্টার শফিকুল আলম ও হাফেজ রবিউল বাশার। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান ও সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, মাওলানা কবিরুল ইসলাম, সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও গাওসুল আযম হাদি, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মুখতার হুসাইন, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আব্দুর রশীদ বিশ্বাস, ফুলতলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা, সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁন, খানজাহান আলী থানা আমীর ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো ও সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন।

সোমবার এক শোক বার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ মাওলানা আবু জাফর মোল্লা বহু সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। দক্ষ সংগঠক হিসেবে তিনি ইসলামি আন্দোলনের কাজকে একটি মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন এবং ইসলামি আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী মাওলানা আবু জাফর মোল্লা ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক জীবন-যাপনের চেষ্টা করতেন। তিনি দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন।