মানবসভ্যতার ধারাবাহিকতা রক্ষা, উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধি অর্জনে ঐতিহ্য-স্থাপনার বহুমাত্রিক গুরুত্ব রয়েছে। পূরাকীর্তি নিছক কোনো অবকাঠামো নয়, এর মধ্যে রয়েছে শতশত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির অমূল্য উপাদন যা শিক্ষা-গবেষণারও গুরুত্বপূর্ণ টুলস। এ থেকে নতুন নতুন দিক উন্মোচন হতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে এসব ঐতিহ্য-স্থাপনা টিকিয়ে রাখা অপরিহার্য। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান হুমকি বিশ্বঐতিহ্য -স্থাপনাসমূহের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। ফলে এই অমূল্য উপাদান সংরক্ষণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনা সংরক্ষণে যথাযথ গুরুত্বারোপ প্রয়োজন। সময় এসেছে এসব স্থাপনা সংরক্ষণে জনসচেতনতা তৈরি, স্থানীয় বা এলাকার বাসিন্দাদের সম্পৃক্ততার, সরকার ও স্থানীয় নেতৃত্বেও আরও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনের এবং সর্বপরি বিশ্বব্যাপী একটি কমন প্লাটফর্ম সংগঠনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সোচ্চার ভ’মিকা পালনের। বক্তারা আরও বলেন বাগেরহাট, ইউনেস্কো ঘোষিত একটি বিশ্বঐতিহ্য স্থান, যার অনন্য স্থাপত্য, ধর্মীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে, তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতিবর্ষণ, ঘূর্ণিঝড়, জলাবদ্ধতা এবং লবণাক্ততার বিস্তার। এখানকার স্থাপনাসমূহ বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকিতে রয়েছে। এছাড়া দেশে দেশে যুদ্ধ সংঘাত, আধিপত্য এবং স্বার্থন্বেষী মহলের কারণেও বিশ্বঐতিহ্য ধংস হচ্ছে। এসব নেতিবাচক প্রভাব থেকে কিভাবে তা সংরক্ষণ করা যায় তা নিয়ে কাজ করা খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক উদ্যোগে চৎবংবৎারহম খবমধপরবং প্রকল্পের আওতায় ১৫ মে (বৃহস্পতিবার) থেকে ১৭ মে (শনিবার) পর্যন্ত খুলনার স্থানীয় একটি হোটেলে ‘ঐতিহাসিক মসজিদ নগরী বাগেরহাটে জলবায়ু ঝুঁকি মূল্যায়ন বিষয়ক তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ সব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অনলাইলে যুক্ত থেকে সভপতিত্ব করেন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ড. ভিক্টোরিয়া হারম্যান।

প্রধান অতিথি হিসেবে তিনদিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কর্মশালার উদ্বোধন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী। তিনি বলেন, এটা একটা ভালো উদ্যোগ যে জলবায়ুগত পরিবর্তনে সৃষ্ট হুমুকি থেকে ঐতিহ্য-স্থপানা সংরক্ষণে সবিশেষ উদ্যোগ নিয়ে প্রিজার্ভিং লিগাসিস প্রকল্প কাজ করছে এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ আরও অনেকেই এর সাথে সম্পৃক্ত। এটা একটা সময়োপযোগী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। বাগেরহাটের ষাটগুম্বজ মসজিদ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে এবং তা সমানভাবে পর্যটকদের কাছে সমৃদ্ধ। আমাদের দেশে আরও এ রকম স্থাপনা রয়েছে যা সংরক্ষণ য পরিচিতি লাভ করলে পর্যটন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তা ছাড়া এসব স্থাপনা ইতিহাসের অমূল্য উপাদান। তিনি এই টিমের নির্বাহী পরিচালকসহ সমন্বয়কারী ও অন্যান্য সদস্যদের তাঁর নিজের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।