রংপুরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের হেল্পডেক্সে শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়েছে ৬ জন। এ ব্যাপারে পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। ছাত্র শিবিরের শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে রংপুর পুলিশ লাইন স্কুলের পাশে চিরিয়াখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ৬ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ওয়ালিউল্লাহ ইসলাম এবং আল আমিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উপস্থিত একাধিক ছাত্রশিবিরের শিক্ষার্থী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থাকলে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে বাংলাদেশ ছাত্রশিবির রংপুরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হেল্পডেক্স বসানো হয়েছে।

সেখানে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করায় চিড়িয়াখানার কর্মচারীরা বাধা দেয় বিনামূল্যে সহযোগিতা করতে দেওয়া হবে না বলে কর্মচারীরা তাদের জায়গায় টাকার বিনিময়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে বলে। এক পর্যায়ে শিবিরের স্কুল বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। পরে ছাত্রশিবির সিন্ডিকেট, টোকাইদের আস্তানা, অবৈধ টেন্ডার বাতিল চাই বলে একটি মিছিল করে।

ছাত্র শিবিরের মহানগর সাহিত্য সম্পাদক জাহিদুর রহমান বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার পরে জায়গা না পেয়ে এখানে আমরা হেল্প ড্রেক্স দিয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য মোবাইল মানিব্যাগ নিয়ে টোকেন দিচ্ছিলাম। এর কিছুক্ষণ পরে ঠিকাদারের লোকজন এসে বলে এখানে দেয়া যাবে না। কিছুক্ষণ পরে তারা এসে ২০-২৫ জনের ব্যাগ মোবাইল মানিব্যাগ সহ আল আমিন এবং দবিরুল কে নিয়ে যায়। পরে তাদেরকে বেধড়ক পেঠানো হয়। পরে টাকা দিয়ে সমাধান করতে চাইলে আমাদের প্রচার সম্পাদক আতিক ভাই সেখানে উপস্থিত হয়। তাকেও বেধাড়ক পেটানো শুরু করে সন্ত্রাসীরা।

ছাত্রশিবিরের রংপুর মহানগরের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, ছাত্রশিবির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে হেল্প ডেস্ক খুলেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য। আমরা এই হেল্প ডেস্ক খুলতে দেবে না চিড়িয়াখানা ঠিকাদারের লোকজন। ফলে আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। মেহেদী নামের ছেলেটাকে আইডেন্টিফাই করেছি ।

ছাত্রশিবির রংপুর মহানগরের প্রচার সম্পাদক, আতিকুজ্জামান আতিক বলেন- সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিগি¦দিক ঘুরতেছে এ সময় ছাত্রশিবির এগিয়ে এসেছে। সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার আওতায় আনতে হবে এবং আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

কোতোয়ালি থানা যুব বিভাগের মারুফ বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে সহযোগিতা করছে পরীক্ষার্থীদের। এদিকে সন্ত্রাসীরা টাকার বিনিময়ে হেল্প ডেস্ক খুলেছে সাইকেল গ্যারেজে। ফলে আমাদেরকে তা করতে দেওয়া হবে না। তাই আমাদের শিক্ষার্থীদের কে হামলা করেছে এটি পরিকল্পিত ঘটনা। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর কিনা সেটিও দেখতে হবে।

শনিবার সকালে রংপুর মহানগরের চিড়িয়াখানার সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরা হলেন ঐ এলাকার রিয়াজুল ও সোহেল।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা শুরুর পূর্বে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ছাত্রশিবিরের হেল্প ডেস্কে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের রাখা বিভিন্ন সরঞ্জাম ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান। পরে পুলিশের সহযোগিতায় সেগুলো উদ্ধার করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।

শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি হেল্প ডেস্কে হামলার বিষয়ে রংপুর মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে রংপুরের যে-সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে, সেসব স্থানে আমরা বিনা মূল্যে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করেছি। কিছু ব্যবসায়ীও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য হেল্প ডেস্ক তৈরি করেন। কিন্তু আমাদের হেল্প ডেস্কের কারণে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। সেজন্য অতর্কিতভাবে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী স্টাইলে শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তারা স্থানীয় সাইকেল গ্যারেজের লোকজন। সুষ্ঠু তদন্ত ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’

রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, শিবিরের হেল্প ডেস্কে ব্যবসায়ীদের হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ছাত্রশিবির কর্মীদের ওপর হেল্প ডেস্ক তৈরি করাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী হামলা চালান। পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। এরমধ্যে জড়িতদের দু’জনকে আটক করা হয়েছে।