এইচ এম হাসিবুল হাসান, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) : হেমন্তেই শীতকালীন শাক-সবজি চাষ করে মানিকগঞ্জের কৃষকরা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। বেশি লাভের সুযোগে তারা আগাম সবজি চাষে ঝুঁকছেন। এদিকে, কৃষকদের উৎসাহিত করতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে। সরজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জে মাঠের পর মাঠ সবুজ আর লাল ফুলে ভরে উঠেছে শীতের আগাম শিম গাছ। ফুলকপি ও বাঁধাকপিরও বাম্পার ফলন হয়েছে মাঠজুড়ে। সবজির ভালো দাম থাকায় মধ্যরাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমি থেকে সবজি সংগ্রহ, বিক্রি ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। হেমন্তে আগাম শীতের শাক-সবজি চাষে বেশি লাভ হওয়ায় খুশি কৃষকরা। আগাম উৎপাদনের মাধ্যমে তারা লাখ লাখ টাকার আয়ের আশা করছেন। সাটুরিয়া উপজেলার কৃষক বশির জানান, কয়েক বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও মুলাসহ নানা সবজি চাষ করেছি। আগাম উৎপাদনের কারণে কপি বর্তমানে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন প্রচুর লাভ হচ্ছে।

জানাগেছে, জেলার ঘিওর, সিংগাইর, সাটুরিয়া ও সদর উপজেলায় আগাম শীতের সবজির চাষ সবচেয়ে বেশি। শীতের আগাম ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, মুলা, সিম চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। মাঠ প্রস্তুত করা, চারা রোপণ, আগাছা পরিষ্কারসহ নানা কাজের মধ্যে দিন কাটছে।

কৃষকরা বলছেন, আগাম সবজি চাষে অধিক লাভ হওয়ায় এ চাষে ঝুঁকছেন তারা। আরিফ নামের এক চাষি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আগাম সবজি চাষ করছি। এতে ভালো লাভ পাচ্ছি। আগাম চাষে একদিকে ফসল দ্রুত বাজারে আসে, অন্যদিকে এক ফসল তোলার পর আরেক ফসল লাগাতে পারি। আমার দেখাদেখি অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন।’

আরেক চাষি বিক্রম বলেন, ‘আগাম ফসলের চাহিদা অনেক বেশি। অল্প সময়ে বিক্রি করা যায়। অল্প সময়ে টাকা ঘরে আসে। আগাম চাষ আমাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। তাই সবাই আগ্রহ নিয়ে চাষ করছি।’

মুজাফফর নামে আরেকজন চাষি বলেন, ‘প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগাম চাষ ও বহু ফসল ফলানো উত্তম সময় এখন। ইউটিউব ও ফেসবুকের সাহায্যে নতুন প্রযুক্তি অনুসরণ করে কাজ করছি। এতে ভালো ফল হচ্ছে, আনন্দ এবং আয় উভয়ই বাড়ছে।’

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান বলেন, ‘সময় বদলাচ্ছে, কৃষির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগাম সবজি চাষ বাড়ছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় দিন দিন কৃষকরা এ চাষে ঝুঁকছে।’

অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর মানিকগঞ্জে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম শাকসবজির চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের থেকে এক হাজার হেক্টর বেশি।