ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় নাম না থাকলেও পাস, এমনকি শুন্য পেয়েও উত্তীর্ণ দেখিয়ে লাইসেন্স প্রদান এমন ভয়াবহ অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৫ জুলাই গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে ছদ্মবেশে ও পরে পরিচয় দিয়ে দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে এসব তথ্য উদঘাটন করেন দুদক, গাজীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এনামুল হক।
তিনি জানান, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) গাজীপুর কার্যালয়ে ঘুষ ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া সম্ভব নয় এমন একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় নির্দেশে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে দেখা যায়, ড্রাইভিং পরীক্ষার খাতায় কোনো প্রার্থীর নাম না থাকলেও তাকে পাস দেখানো হয়েছে। কেউ কেউ শুন্য (০) পেয়েও উত্তীর্ণ হয়েছেন।
নিয়ম অনুযায়ী, ২০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অন্তত ১২ পেতে হয় পাসের জন্য। কিন্তু অভিযানে দেখা গেছে, অনেক পরীক্ষার্থী সেই মানদণ্ডে না পৌঁছালেও অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের সহায়তায় তারা পাস করেছেন এবং লাইসেন্স পেয়েছেন। এনামুল হক জানান, “এটি শুধুমাত্র অনিয়ম নয়, জননিরাপত্তা নিয়ে খেলা। অদক্ষ চালকদের রাস্তায় নামার সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যা প্রতিদিন সাধারণ মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।”
দুদকের এই অভিযানে লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের ক্ষেত্রে অন্তত ছয় ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এনামুল হক আরও বলেন, “আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জব্দ করেছি এবং কিছু ফটোকপি পরে সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। সব তথ্য যাচাই করে তা কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠানো হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা খাতুন বলেন, “বিআরটিএ গাজীপুর অফিসের কিছু অদক্ষ ও অনিয়মে জড়িত কর্মচারীর বিষয়ে আমরা এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। দুদকের চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে এ ধরনের অনিয়ম শুধু আইনের শাসনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং দেশের প্রতিটি পথচারী ও চালকের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই দুর্নীতির শিকড় বহু গভীরে, শুধু অভিযান নয়, চাই কঠোর শাস্তি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।