এম এ আর মশিউর যশোর : প্রতিবছরের মতো এবারও আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে দেশের কুরবানির পশুর হাটগুলোতে জমে উঠেছে প্রস্তুতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট-বড় খামারিরা গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এবারের কুরবানির বাজারে বাড়তি আকর্ষণ হয়ে উঠেছে যশোরের শার্শা উপজেলার পুটখালী গ্রামের এক খামারের সাতটি উট। মরুর জাহাজখ্যাত এই প্রাণীগুলো দেখতে এবং কিনতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন এক বছর আগে সৌদি আরব থেকে শখের বসে সাতটি উট আমদানি করেন। যশোরের সীমান্তবর্তী পুটখালীতে তার নিজস্ব খামারে পশুগুলোর পরিচর্যা করা হচ্ছে। কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে এগুলো এখন বিক্রির জন্য প্রস্তুত। ইতোমধ্যে একটি উট ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি উটগুলোর দাম হাঁকানো হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
নাসির উদ্দিন বলেন, শখের বসে উট এনেছিলাম। তবে মানুষের আগ্রহ দেখে এখন বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ দেখতে আসছে। কেউ ছবি তুলছে, কেউ ভিডিও করছে। এই অভিজ্ঞতা সত্যিই ভিন্ন রকমের।
উটগুলোর উচ্চতা ১২ থেকে ১৫ ফুট। প্রতিদিন গোসল করানো হয়, ভুট্টা, ঘাস ও ছোলা খাওয়ানো হয়। নির্ধারিত ডায়েট চার্ট অনুযায়ী প্রতিটি উটের যতœ নেয়া হচ্ছে। খামারের কর্মীরা জানান, পশুগুলো যাতে সুস্থ থাকে সে জন্য নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপু কুমার সাহা বলেন, উট এদেশের প্রাণী না, তাই বিশেষ যতেœর প্রয়োজন হয়। আমরা নিয়মিত খামার পরিদর্শন করছি এবং পশুগুলোর সুস্থতা নিশ্চিত করছি। একইসঙ্গে ইনজেকশন পুশ করে মোটাতাজা করা হচ্ছে কি না, তাও দেখা হচ্ছে।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে দেশের গরুর বাজারেও ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। খামারিরা জানিয়েছেন, এ বছর গো-খাদ্যের দাম কিছুটা বেশি থাকলেও পশুর স্বাস্থ্য ও গুণগত মান ভালো। তাই দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্রেতারা জানাচ্ছেন, বাজারের দামের উপর যেমন নজর রাখছেন, তেমনি পশুর স্বাস্থ্য এবং ইনজেকশনমুক্ত প্রাণী কিনতে আগ্রহী। পশু মোটাতাজাকরণে কেমিক্যাল বা নিষিদ্ধ ইনজেকশন ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা দেখেই পশু কেনা হবে বলে জানান ক্রেতারা।
সব মিলিয়ে এ বছর কুরবানির বাজার বেশ প্রাণবন্ত। তবে উটের মতো ব্যতিক্রমী পশু মানুষের বাড়তি আগ্রহ তৈরি করেছে। শিশু-কিশোর থেকে বয়স্করা পর্যন্ত উট দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন পুটখালীতে। এই দৃশ্য যেন ঈদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশজুড়ে এখন চলছে কুরবানির প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তের কাজ। খামারিরা প্রত্যাশা করছেন, ভালো দাম পেলে এই খাত আরও লাভজনক হয়ে উঠবে। আর ক্রেতারা অপেক্ষায় আছেন পছন্দের পশুটি ঘরে তোলার জন্য। সবমিলিয়ে ঈদুল আযহার কুরবানির বাজারে জমজমাট উৎসবের আমেজ।