মাগুরা সংবাদদাতা: বাংলাদেশের প্রধান সেচপ্রকল্প জি.কে প্রকল্প। এ প্রকলেল্পর তিনটি প্রধান সেচ পাম্বের দুটিই অচল। বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হবার আশংকা রয়েছে। কয়েক বছর ধরে পড়ে আছে অচলাবস্থার। একটি সেচ পাম্প সচল থাকলেও তা দিয়ে প্রকল্প এলাকায় সেচের পানির চাহিদা মোটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেচের আওতাধীন এলাকায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মক ভাবে।

সেচের মাধ্যমে আগে প্রকল্প এলাকায় প্রথম খরিপ মৌসুমে আউশ ও দ্বিতীয় খরিপ মৌসুমে আমন ধানের চাষ করা হত। সেচের আওতায় রয়েছে ৯৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি। এরমধ্যে বোরো মৌসুমে মাত্র ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়েছে। বাকি এলাকা বোরো মৌসুমে সেচ বঞ্চিত।

মাগুরা জেলার টুপিপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেক জানান, আগে আউশ ও আমন-চাষাবাদে পানি দেয়া হত কিন্তু এখন আর পানি মিলছে না। এলাকার চাষীরা শ্যালো মেশিন বসিয়ে পানি দিচ্ছে জমিতে। এতে খরচ হচ্ছে বেশি। সেচ খরচ বাবদ উৎপাদিত ধানের চার ভাগের এক ভাগ ধান দিতে হচ্ছে শ্যালো মেশিন মালিককে।

১৯৫৪-১৯৫৫ সালে জি.কে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়। দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করে কাজের শুরু হয়। ১৯৭০ সালে ২০ কোটি ৫৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রথম পর্যায়ের কাজ ১৯৭০ সালে শেষ হয়। মাগুরা, ঝিনাইদাহ, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা সহ ১৩ উপজেলা নিয়ে এ প্রকল্প জমিতে সেচ দানের জন্য প্রধান সেচ খাল, সেকেন্ডারী, টারশিয়ারি মিলিয়ে অসংখ্য খাল রয়েছে প্রকল্প এলাকাতে। ভেড়ামারাতে স্থাপন করা হয় সবচেয়ে বড় পাম্প হাউজ। সেখানে বসানো হয় তিনটি প্রধান পাম্প, ১২টি সাবসিডিয়ারী পাম্প। সঠিকভাবে কাজ পরিচালনা করার জন্য কুষ্টিয়া তে প্রধান অফিস, মাগুরা ঝিনাইদহ, শৈলকুপা ও চুয়াডাঙ্গাতে ডিভিশনাল অফিস স্থাপন করা সহ বিভিন্ন স্থানে অফিস স্থাপন করা হয়। সেচ খালের পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়। গড়ে ওঠে সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থা।

ভেড়ামারা পাম্প হাউজের মাধ্যমে ১৯৬২ সালে পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে সেচ খাল গুলোর মাধ্যমে চাষের জমিতে পানি সরবরাহ করা হত। ১৯৬২ সালের প্রথম দিকে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা হয়। প্রকল্প এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, জনবল সংকটে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অবশিষ্ট অফিস গুলো বেদখল হয়ে যায়, চুরি হয় প্রকল্পের অনেক যন্ত্রাংশ।

ধীরে ধীরে পাম্প হাউজের সাব সিডারি পাম্প গুলো অকেজো হয়ে পড়ে। দুটি প্রধান সেচ পাম্প ও অচল হয়ে পড়ে। এখন মাত্র একটি পাম্প দিয়ে সেচ কাজ চালানো হচ্ছে।

সেচ প্রকল্পের প্রধান পরিচালক প্রকৈৗশলী মোঃ আঃ হামিদ জানান, এ প্রকল্প পুর্নবাসন কালে আধুনিক প্রধান সেচ পাম্প বসানো হবে। নতুন করে ভেঙ্গেপড়া কালভাট ও ব্রীজ গুলো পুনরায় নির্মান করা হবে। এতে করে প্রাণ ফিরে পাবে প্রকল্পটি, উপকৃত হবেন এলাকার চাষীরা। লোকবল নিয়োগ দেয়া হবে।

তিনশত কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে পুনবার্সন প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন ও পাশ হয়েছে। প্রধান উপদ্ষ্টোর অনুমোদন পেলেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।