মাধবদী (নরসিংদী) সংবাদদাতা: আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে চর্মরোগ স্ক্যাবিস শিশু, নারী, বয়স্কসহ সব বয়সী মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এক পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অল্প সময়ের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো পরিবারে। প্রতিদিনই মাধবদীর প্রাইভেট হাসপাতালগুলো সহ নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে স্ক্যাবিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে।
গত বুধবার সকালে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের করিডোর ও বারান্দাজুড়ে উপচেপড়া রোগীর ভিড়। চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে লম্বা লাইন, ভেতরে প্রবেশের অপেক্ষায় অসংখ্য রোগী। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের কর্মীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী স্ক্যাবিস ও খোস-পাঁচড়াসহ বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন রোগীরা।
নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মহিষাশুড়া ইউনিয়নের গাংপার বর্ধ্ব গ্রামের ওসমান গনি নামে এক রোগী বলেন, দুই মাস আগে হঠাৎ আঙুলে চুলকানি শুরু হয়, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো শরীরে। ঘামাচির মতো ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং শরীরে ব্যথা শুরু হয়। কয়েক দফা হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার শুধু ওষুধ লিখে দিচ্ছেন, যা বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। ওষুধে কাজ না হওয়ায় এখন মাধবদীতে প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেয়ে যাচ্ছি।
আরেক রোগী মাদরাসার ছাত্র তাহসিন হোসেন বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে দুই হাতের কনুইয়ের ভাঁজে চুলকানি। দিন দিন চুলকানি বেড়ে যাচ্ছিল। আমার আরও চার-পাঁচজন সহপাঠীর একই উপসর্গ দেখা দিয়েছে। ৬-৭ দিন পরপর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছি। কমছে না কিছুতেই।
সদর উপজেলার বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলেন, প্রথমে ছেলেটার হাতে চুলকানি হয়, এখন পুরো পরিবার আক্রান্ত। রাতে ঘুমানোই কষ্টকর হয়ে গেছে।
মাধবদী পৌর শহরের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, কয়েকদিন ধরেই চুলকানি বেড়ে যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম তেমন কিছু না, এখন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে মাধবদী প্রাইম জেনারেল প্রাঃ হাসপাতালে এসেছি ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে। তিনি আরো বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে এই চুলকানি করোনার টিকার কারণে হতে পারে।
মাধবদী প্রাইম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ড. রায়হান আমির বলেন, “স্ক্যাবিস দ্রুত সংক্রমিত হলেও এটি প্রতিরোধযোগ্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। তা না হলে সংক্রমণ পুনরায় ফিরে আসে। গরম ও বর্ষাকালে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। অনেকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন, ফলে সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় জটিলতা বাড়ে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে কিডনি ও ত্বকের জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে অক্টোবরের শেষদিকে শিতের আগমনে প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেন তিনি। আবাসিক এলাকায় এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। যেমন আবাসিক মাদরাসা, ছাত্র হোস্টেল ইত্যাদি। আবার পরিবারের একজনের থেকেও অন্য সবার হতে পারে বলেও তিনি জানান।”
নরসিংদী সদর হাসপাতালের শিশু বিষেষজ্ঞ ডা. আব্দুল বাকির বলেন, “স্ক্যাবিস ও দাউদ- উভয়ই অত্যন্ত সংক্রামক রোগ। আর্দ্র পরিবেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগেও এসব রোগ ছিল, তবে বর্তমানে বাজারের ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় সংক্রমণ বেড়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সংক্রমণ সবচেয়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে। আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিনই শতাধিকেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজও প্রায় ১০০ এর অধিক রোগী বহি:বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। চর্মরোগ স্ক্যাবিসের এই প্রাদুর্ভাব জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি এই মুহূর্তে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার সবচেয়ে কার্যকর উপায় বলে মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞ।”