ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আহমেদ বিন হামাদ আল-খালিলি সম্প্রতি ভারত সরকারের প্রতি মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ পরিহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারত যেন অতীতের মুসলিম শাসকদের দয়া ও সহানুভূতির কথা স্মরণ করে। মিডল ইস্ট আই।

এক বিবৃতিতে তিনি পাকিস্তানকে ‘আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনের’ জন্য অভিনন্দন জানান যার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে ভারতের দিকেই ইঙ্গিত করেন তিনি।

মুফতি আরবিতে বলেন, ‘আমরা আশা করি পাকিস্তান দৃঢ়তা ও শক্তির সঙ্গে তাদের নিপীড়িত মুসলিম ভাইদের পাশে থাকবে, বিশেষ করে পবিত্র আল-আকসা ভূমিতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভারতের সরকারকে আহ্বান জানাই যেন তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের শত্রুতার মনোভাব পরিহার করে এবং স্মরণ করে যে অতীতে ভারতের মুসলিম শাসকেরা জনগণকে ধর্ম নির্বিশেষে দয়া ও সহনশীলতায় শাসন করেছিলেন।’

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের পূর্বে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দীর্ঘ সময় মুসলিম শাসকদের অধীনে ছিল। বিশেষ করে মুঘল সাম্রাজ্য ১৬শ থেকে ১৮শ শতক পর্যন্ত উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল শাসন করেছিল।

ইতিহাস ও ভূরাজনীতি : ওমান, গোয়াদর ও পাকিস্তান

ওমান সরকার গত শনিবার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তিকে স্বাগত জানায়। উভয় দেশের সঙ্গে ওমানের ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। একইসঙ্গে ওমান পাকিস্তানের সঙ্গে সামুদ্রিক সীমান্তও শেয়ার করে।

বলা দরকার, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে অবস্থিত কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী গোয়াদর ১৭৮৪ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতক ওমানের অধীনে ছিল। ১৯৫৬ সালে নতুন স্বাধীন ভারতকে গোয়াদর বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল ওমান, কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তা প্রত্যাখ্যান করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৮ সালে ওমান গোয়াদর পাকিস্তানকে বিক্রি করে।

ভারতে মুসলিমদের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ

গ্র্যান্ড মুফতির ‘শত্রুতা’ সংক্রান্ত মন্তব্য ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বহুল আলোচিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসেছে। ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে এবং তার শাসনামলে হিন্দু জাতীয়তাবাদের (হিন্দুত্ব) প্রভাব বেড়েছে বলে সমালোচকরা মনে করেন। সমালোচকদের মতে, এই পরিস্থিতি ভারতে মুসলিম, শিখ ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও সহিংসতা বৃদ্ধির পথ তৈরি করেছে। ব্রিটিশ ফরেন অফিসের একটি ২০০২ সালের প্রতিবেদনে গুজরাট দাঙ্গার সময় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘সরাসরি দায়ী’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়, যেখানে ১,০০০-এর বেশি মুসলমান নিহত হন।