চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার সিঙ্গাপুরের মতো হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ১৩৮তম বন্দর দিবস উপলক্ষে শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান তিনি। তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্ম বড় সম্ভাবনা। তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। বিনিয়োগকারী প্রস্তুত। নিরাপত্তা, আস্থা, সুন্দর পরিবেশ চায় তারা। মেরিটাইম ও পোর্ট সিকিউরিটি নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায়।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের কারণে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিশেষ করে বিজনেস সামিটে নতুন বিনিয়োগ আসছে। এর জন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের গতি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিযোগী বিশ্বে টিকতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাঁচ বছর পর ৫ মিলিয়ন টিইইউস কনটেইনারে হ্যান্ডলিং করতে হবে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। এ মাস দেশ ও বন্দরের জন্য সৌভাগ্যের। ২০২৯ সালে মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর অপারেশনে চলে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং একইভাবে রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি কথা জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩৭ হাজার ১৯১.৩২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৩ শতাংশ বেশি। এ রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হ্যান্ডলিং হয়েছে। চলতি বছরের মার্চে রপ্তানি আয়ে গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১১.৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। বর্তমানে কনটেইনার জাহাজ বহিঃনোঙ্গরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে। ক্ষেত্রবিশেষে অনএ্যারাইভ্যাল জেটিতে ভিড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) কনটেইনার হ্যান্ডলিং ২০২৩-২০২৪ এর একই সময়ের তুলনায় ৫.০১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ৭১ লক্ষ ১৩ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৯৬ শতাংশ বেশি। বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ৫৮টি।
বন্দরের সংরক্ষিত এলাকার অভ্যন্তরে ডেলিভারি না যাওয়ায় শেড ও ইয়ার্ডে লোহার বক্স ও রাসায়নিক পণ্য এবং কনটেইনার দীর্ঘদিন পড়েছিল। এই জাতীয় পণ্য বন্দরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে এবং বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এ পর্যন্ত ৩৬৭ বক্স ৬১৭ টিইইউএস কনটেইনার ধ্বংস করা হয় এবং ৩৫৭ বক্স ৬৪০ টিইইউএস কনটেইনার অপসারণ করা হয়। এছাড়াও গত গেল বছর ২৪ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন। তার নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে পি শেডের মাঠ থেকে নিলাম যোগ্য ৩০৪ টি গাড়ী রিমোভ করা হয়। গাড়ীগুলো বর্তমানে বন্দরের বহুতল কার শেডে রয়েছে। কাস্টমস কর্তৃক গাড়িসমূহ নিলামের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ওই স্থানে ইয়ার্ড নির্মাণ করে কনটেইনার ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, বে-টার্মিনালের কনটেইনার টার্মিনাল-১ এবং কনটেইনার টার্মিনাল-২ নির্মাণের জন্য পিপিপি অংশীদার পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত ২০ এপ্রিল বে-টার্মিনালের ডিপিপি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বে-টার্মিনালের চ্যানেলে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প আগামী ২০২৯-২০৩০ সালের মধ্যে সমাপ্ত করা সম্ভব হবে। দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার খ্যাত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পটির প্যাকেজ-১ (২টি জেটি নির্মাণ) এর জন্য জাপানিজ প্রতিষ্টান পেন্টাওশান কন্সট্রাকশান কোম্পানী ও টোয়া কর্পোরেশন এর সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষর গত ২২ এপ্রিল সম্পন্ন হয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ২০২৯ সাল নাগাদ অপারেশনে আসবে। বে-টার্মিনাল হয়ে গেলে টানেলে যানবাহন চলাচল বাড়বে।