কলারোয়া (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা: আধুনিকতার করাল গ্রাসে কলারোয়ায় মৃত শিল্পের ঐতিহ্য টালি আজ হারিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত সকলে বেকার হয়ে পড়েছে। মালিকরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন কি অনেকে বাপদাদার ঐতিহ্য ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। এতে করে এখানকার টালি কারখানা গুলো বন্ধ হয়ে গেছে।এক সময় কলারোয়ার টালি যেত ইটালী সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। এ থেকে মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতো দেশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক রপ্তানি জটিলতা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিকল্প সামগ্রী বাজারে আসার কারণে প্রায় বিলীন হতে চলেছে এই মৃত শিল্প।
এক সময় কলারোয়ার গ্রামাঞ্চলের ঘরবাড়িতে বাঁশ দিয়ে তৈরি কাঠামো টালির ছাউনি দেওয়া হতো।এখন আর ঘরের চালে টালির ব্যবহার খুব একটা দেখা যায়না। আধুনিকায়ন ও কালের আবর্তনে নতুনত্বের ছোঁয়ায় বদলে দিয়েছে সব কিছু। গ্রামাঞ্চলে ও তৈরি হচ্ছে শহরের ধাঁচে বাড়িঘর। বিশেষ করে গ্রামে মাটির তৈরি টালির ছাউনী বাদ দিয়ে ইট, সিমেন্ট ও রডের সাহায্যে করা হচ্ছে ছাদের বাড়ি। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে অনেক অংশে।কলারোয়া উপজেলার গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল টালি কারখানা। এর ব্যবহার কমে যাওয়ায় মালিকরা ইট পোড়ানোর দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
এক সময় পৌর এলাকয় ৪১টি টালি কারখানা ছিলো। প্রতিটি কারখানায় শত শত শ্রমিক কাজ করতো। আর এখানে শ্রম দিয়ে তাদের জীবন জীবিকা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমানে টিকে আছে মাত্র ৭টি কারখানা। এতে করে শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে এই পেশা ছেড়ে ইটের ভাটায় কাজ করছে। অনেক মালিক দেউলিয়া হয়ে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে কারখানা মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, একদিকে জ্বালানি ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে। এর তুলনায় টালির দাম বাড়েনি। এ অবস্থায় লোকসান গুনতে হচ্ছে একের পর এক। অনেক মালিক ইতোমধ্যে তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়েক জন কারখানা মালিক বলেন ,সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিক সহায়তার অভাবে এ শিল্প প্রায় ধ্বংসের পথে।
কলারোয়া উপজেলা টালি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোষ্ট চন্দ্র পাল বলেন, আগে প্রতি মৌসুমে কয়েক লাখ টালি বিক্রি করতাম। এখন এর ব্যবহার কমে যাওয়ায় বিক্রি হচ্ছে না। যার ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় টালির দামও বাড়াতে হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই শিল্পে সহজ শর্তে ঋণ ও বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়া হতো তাহলে আমরা টালি কারখানা গুলো টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
কলারোয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, সরকার এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার টালি কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যাতে করে কলারোয়ার ঐতিহ্য টালি শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
এলাকাবাসী ও সূধীমহল জানান, সময়মতো সরকারি উদ্যোগ ও সহযোগিতা পেলে এ শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন। শুধু কর্মসংস্থান নয়, দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষায়ও এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।