কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা: দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা- কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প। খুলনা বিভাগের চার জেলার ১৩ উপজেলায় এক লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এর কার্যক্রম। প্রকল্পের কুষ্টিয়াসহ চার জেলার ২০৮টি শাখা খাল পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এলাকার কৃষি পড়েছে হুমকির মুখে।
ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ দিতে গিয়ে কৃষকদের খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। নানা সমস্যায় আক্রান্ত জিকে সেচ নামে পরিচিত এই প্রকল্পটির সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন কৃষকরা।
খুলনা বিভাগের চার জেলা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও ঝিনাইদহের ১৩টি উপজেলাকে সেচের আওতায় আনতে ১৯৫৪ সালে হাতে নেওয়া হয় জিকে সেচ প্রকল্প। এর অধীন উপজেলাগুলো হলো কুষ্টিয়ার কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর; চুয়াডাঙ্গার চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা; ঝিনাইদহের ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুন্ড ও শৈলকূপা; এবং মাগুরার মাগুরা সদর ও শ্রীপুর।
কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৫৫-৫৬ সালে শুরু হয়ে জিকে প্রকল্পের প্রথম পর্যায় শেষ হয় ১৯৬৯-৭০ সালে। প্রকল্পের আওতায় আসে প্রধান তিনটি খাল, ৪৯টি শাখা খাল ও ৪৪৪টি উপশাখা খাল।
জিকে সেচ প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা-পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, ১৯৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের তিনটি প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার দৈর্ঘে ৪৯টি শাখা খাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার ৪৪৪টি উপশাখা খাল রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি ৪ মিটার নিচে চলে গেলে প্রকল্পের প্রধান পাম্প কাজ করে না। তখন সাবসিডিয়ারি পাম্প ব্যবহার করা হয়।
৪৪৪টি উপশাখা খালের মধ্যে ২০৮টিই পলি দিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে উপশাখা খালগুলো দিয়েও কাঙ্খিত সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। জিকে সেচ প্রকল্পের বর্তমান সেচযোগ্য এলাকা ৯৫ হাজার ৬১৬ হেক্টর। সক্ষমতা কমে যাওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪০ হাজার
৭৭০ হেক্টর ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাত্র ৩৯ হাজার ৮২৯ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে পানির অভাবে শস্য সংকট একটি সমস্যা। শুষ্ক মৌসুমে তো বটেই, আমন মৌসুমে এবং বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী খরা এই অঞ্চলের নিয়মিত ঘটনা। আর এর কারণ, পদ্মা ছাড়া অন্যান্য ছোট ছোট নদী ও খালগুলোতে পানির প্রবাহ কম।
এ পরিস্থিতিতেই পদ্মা নদীতে পাম্প হাউজ নির্মাণ করে তার মাধ্যমে এলাকায় সেচ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় ব্রিটিশ আমল থেকেই। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান অচলাবস্থা কাটাতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার জিকে সাবসিডিয়ারি পাম্প হাউজ নির্মাণের পাশাপাশি পাম্প হাউজের উৎস মুখ থেকে প্রধান সংযোগ খাল পুনর্খননের প্রস্তাব রয়েছে। জিকে সেচ প্রকল্পে বর্তমানে যে তিনটি প্রধান সেচ খাল রয়েছে, সেগুলো পুনরাকৃতিকরণের প্রস্তাবও রয়েছে।
সবগুলো খাল পুনর্খনন করা হলে সেচযোগ্য এলাকা আগের পরিমাণে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের মোহাম্মদ রাশেদ ওয়াসিফ ও এস এম শফিকুল ইসলাম গত ১৯ ও ২০ এপ্রিল প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখে নিজেদের মতামত জানান পরিকল্পনা কমিশন ইতিবাচক মনোভাবই পোষণ করছে।
পরিকল্পনা কমিশন বিভাগের সদস্য আব্দুল বাকী বলেন, জিকে সেচ প্রকল্পটি ওই অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খাল ভরাট হওয়া, পাম্প নষ্ট হওয়ার মতো বিভিন্ন কারণে প্রকল্পটি আগের মতো কার্যকর নেই। নতুন করে খাল খননসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে আবার জিকে সেচ প্রকল্পটি সবার কাজে লাগবে। সে কারণে পিইসি সভার পর বেশকিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
নানা সমস্যায় আক্রান্ত জিকের এই প্রকল্পটির সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন কৃষকরা। কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন, খোকসা উপজেলার হিজলাবটের কৃষক ছমির শেখ, কৃষক সুমন মিয়া জানান, শাখা খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। পানি ঠিকমত সরবরাহ হয় না, বাধ্য হয়ে আমরা কয়েকগুন টাকা বেশি খরচ করে সেলো দিয়ে পানি উঠাচ্ছি। দীর্ঘদিন আমরা পানির এই সমস্যায় আছি। কৃষকরা দ্রুত খাল সংস্কার করে পানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার দাবী করেন।