সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ইমন হোসেনকে গত ১৮ এপ্রিল লাঠির আঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শুরুতে দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছিল, এসএসসি পরীক্ষায় খাতা না দেখানোর জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছিল, তবে র্যাব এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে। এ ঘটনায় র্যাব-১২ ও র্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে তথ্যপ্রযুক্তি সাহায্যে শুক্রবার (১৬ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন পশ্চিম মানিকদি এলাকা থেকে মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ৯ মে মামলার ২ নম্বর আসামি সাকিবকেও গ্রেপ্তার করে র্যাব-১ ও র্যাব-১২।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে র্যাব-১২ এর সদর দপ্তরের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র্যাব-১২ এর অধিনায়ক মোঃ আতিকুর রহমান মিয়া (পিপিএম)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের চারদিন আগে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল হোসনা মার্কেট এলাকায় ইমনকে তার ছোট বোনের সঙ্গে দেখে মাসুদ রানা কটূক্তি করে এবং তাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ইমন বিষয়টি অপমানজনক মনে করে। পরে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর ইমন ও তার বন্ধুরা মাসুদ রানাকে চড়থাপ্পড় মারে এবং পকেটে থাকা ৩৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে মাসুদ রানা তার বন্ধু স্বাধীন ও সাকিবসহ আরও কয়েকজন পরামর্শ করে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
ঘটনার দিন ১৮ এপ্রিল বিকেলে মাসুদ রানা দৌলতপুর কলেজ মাঠে বসে থাকা অবস্থায় এক অজ্ঞাত যুবকের ডাকে শহীদ মিনারের কাছে চলে যায়। সেখানে গিয়ে ইমনসহ আরও ৫-৬ জনকে দেখতে পায় এবং পৌছা মাত্র তারা মাসুদকে মারধর শুরু করে ও আলামিনের খোঁজ জানতে চায়। মারামারির একপর্যায়ে মাসুদ তাদের হাত থেকে পালিয়ে দৌড়ে নিজের বাড়িতে চলে আসে।
পরে মাসুদ রানা তার বন্ধুদের ফোন করে ঘটনাটি জানায়। তারা সবাই মাসুদের বাড়িতে মিলিত হয়ে পরিকল্পনা করে এবং ইমনকে খুঁজতে বের হয়।
একপর্যায়ে বেহাপাড়া এলাকায় ইমনকে দেখতে পেয়ে তারা ঘিরে ধরে। মাসুদ রানা তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ইমনের মাথায় সজোরে আঘাত করে। স্থানীয়রা সেখানে গিয়ে মাসুদ রানা ও সাকিবকে আটক করে একটি ঘরে আটকে রাখে এবং ইমনকে হাসপাতালে পাঠায়। পরে মাসুদ রানা ও সাবিক সেখান থেকে কৌসলে পলায়ন করে।
আহত অবস্থায় ইমনকে প্রথমে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিছুদিন চিকিৎসার পর সে বাড়ি ফিরে আসে। তবে ২৫ এপ্রিল ভোরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত ইমনের বাবা ২৭ এপ্রিল বেলকুচি থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই মাসুদ রানা ও তার সহযোগীরা পলাতক ছিল। র্যাব আরও জানায়, আসামীদেরকে বেলকুচি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।