বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুফতি কাজী ইবরাহীম বলেন, শহীদেরা হলো ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তি। ফাঁসির রশিতে যারা জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন, তারা হলেন আমাদের শেকড়। শেকড় তো সব সময় নিচেই থাকে, ডালপালারা উপরে ছড়িয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, তাদের জীবন দেয়া- এটি হল গাজওয়াতুল হিন্দের প্রথম পর্ব। আরো পর্ব সামনে আসতেছে। আরো জীবন দিতে হবে। সেখানে জীবন দেবো আমরা, ইনশাআল্লাহ। আমরা জনতার কাতারে মিশে গিয়ে জীবন দেবো। তিনি বিগত আওয়ামী শাসনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বিগত ১৭ বছর আমাদের যে অবস্থা ছিল তাদের এখন সে অবস্থা। তখন বিজয় ছিল তাদের হাতে আমাদের দিকে ছিল পরাজয় আর এখন বিজয় আমাদের দিকে আর পরাজয় তাদের দিকে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে একটি রেজিম পরিবর্তন হয়নি, একটি পৃথিবী পরিবর্তন হয়েছে। ২০২৪ সনে আমরা একটি জীবন উপহার পাইনি শতাব্দী উপহার পেয়েছি। এটি ইমাম মাহদীর শতাব্দী। ইসলামী খেলাফতের শতাব্দী। ঈসা আলাই সালাম এর শতাব্দী। ইসলামের সর্বশেষ বিশ্বায়ন, অর্ধ পৃথিবী তো আগেই মুসলিম, বাকী অর্ধেক পৃথিবী আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিজস্ব ক্ষমতায় ইসলামের ছায়ায় চলে আসবে। তিনি বলেন, আমাদের শহীদেরা হলো ভিত্তি, তারা হলো শেকড়। যে বৃক্ষের শেকর যত মাটির গভীরে থাকে শাখা প্রশাখা তত উপরে বিস্তৃতি লাভ করে। তিনি আরো বলেন, আজকে যে ইসলামের বিজয় তার শেকড় ছিলেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শহীদ মতিউর রহমান নিজামী, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। তিনি বলেন, আমাদের এখন কোন ভয়ের কারণ নেই, তিনি কুরআনের আয়াত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তোমরা জালিমদের দিকে ঝুঁকে পড়ো না, তাদের দিকে যদি ঝুঁকে পড়ো তাহলে তোমাদের জাহান্নাম। ফ্যাসিবাদীদের ব্যাপারে কোন ছাড় নেই।

এর আগে বেলা ১০টা ৩০মিনিটে আল্লামা সাঈদী মুফতি কাজী ইবরাহীম এর নেতৃত্বে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এর ছেলে আলী আহমদ মাবরুর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ্যাডভোকেট গাজী তামিমসহ শহীদ পরিবারের সন্তানেরা আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনে এসে পৌঁছালে জেলা আমীর অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসাইন ফরিদ এর নেতৃত্বে জামায়াতের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাদেরকে স্বাগত জানান। এরপর তাদের সৌজন্যে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে জেলা নেতৃবৃন্দ তাদেরকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন।

ডেপুটি এটর্নিজেনারেল গাজী তামিম বলেন, যে ট্রাইবুনালে আমি আসামিপক্ষের হয়ে কাজ করতাম সেই ট্রাইব্যুনালেরই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে কাজ করছি, একটি মিরাকেল। এ সময় তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে অনেক স্মৃতিচারণমূলক কথা বলেন।

ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন বলেন, আমি এই প্রথম পিরোজপুরে আসলাম। এ সময় তিনি স্মৃতি কাতর হয়ে পড়েন। বলেন, সাঈদী চাচা আমাদেরকে তার নিজ সন্তানের মত ভালবাসতেন। জীবনে এমন কখনো হয়নি যে, যতবার তার সাথে দেখা হয়েছে তিনি আমার কপালে চুমু দেননি। এ কথায় উপস্থিত সকলের চোখ ছল ছল করে ওঠে, সকলেই ডুকরে কেদে ওঠেন। তিনি বলেন, এই যে আমরা শহীদের সন্তানেরা এখানে বসে আছি, আমাদের শহীদ পিতারা আমাদের উপরে এই ইসলামী আন্দোলন রেখে গেছেন এটা একটি পবিত্র আমানত এ আমানতকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমরা যদি এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে না পারি তাহলে পরকালে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে কি জবাব দেব। তিনি আরো বলেন, তাদেরকে অন্যায়ভাবে শহীদ করা হয়েছে এর প্রত্যেকটার হত্যার বিচার হওয়া উচিত।

আলহাজ্ব মাসুদ সাঈদী বলেন, অন্যায়ভাবে আমাদের পিতাদেরকে শহীদ করা হয়েছে কিন্তু আমরা ভেঙ্গে পড়িনি। বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের রক্তের বদলা নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিরোজপুর জেলা শাখার আমীর অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসাইন ফরিদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ জহিরুল হক, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা সিদ্দিকুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকসহ বিভিন্ন উপজেলা আমীর সেক্রেটারিগণ উপস্থিত ছিলেন।