চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার চরপাথরঘাটা এলাকায় দীর্ঘ ২০ বছর ধরে অবৈধভাবে ঝুট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার দায়ে অভিযুক্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাসমত আলী। এলাকার সাতটি তৈরি পোশাক কারখানা থেকে তিনি নিয়মিত ঝুট সংগ্রহ করে থাকেন। পাশাপাশি ঝুটের আড়ালে বন্ডের কাপড় পাচারের সঙ্গেও জড়িত তিনি। অবৈধ এ ব্যবসার মাধ্যমে ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন হাসমত আলী। বছরের পর বছর এভাবে ব্যবসা চালালেও কোনো আইনি বাধার মুখে পড়েননি তিনি। কর্ণফুলীতে বর্তমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে উসকানি এবং পতিত আওয়ামীলীগকে পুর্নবাসন করতে অর্থযোগান দিচ্ছেন তিনি। একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তিনি এখন গ্রাম ছেড়ে শহরে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে চরপাথরঘাটা এলাকায় তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীদের বেতন বকেয়ার নামে আন্দোলনে নামানোর জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেছেন। আন্দোলন দমানোর নামে মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন তিনি। এছাড়া ওই এলাকায় সড়কের ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন শতাধিক দোকান। এসব দোকান থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে ভাড়া তোলেন তিনি। সরকারি সড়কে গড়ে তোলা দোকানে ভাড়া দিতে না চাইলে দোকানিকে মারধর করেন হাসমতের বাহিনী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় এবং আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। তবুও কর্ণফুলী থানা পুলিশের সাথে সখ্যতার কারণে তিনি সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. হাসমত আলী মূলত পেশায় একজন ড্রাইভার ছিলেন। এলাকায় একাধিক তৈরি পোশাক কারখানা গড়ে ওঠার পর তিনি একটি কারখানায় নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি নেন। সেখান থেকেই তার ভাগ্য পরিবর্তনের শুরু। প্রহরীর চাকরির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাসমত আলী পোশাক কারখানার মালিকদের পণবন্দী করে নামমাত্র দামে ঝুট কিনতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই অবৈধ ব্যবসা বিস্তৃত হয়ে যায় এবং একপর্যায়ে তার ভাই মাহবুব আলীও এতে যুক্ত হন। ঝুট ব্যবসা থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ মাসোহারা হিসেবে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার কাছে পৌঁছে যেত। ফলে পুরো এলাকার তৈরি পোশাক কারখানার নিয়ন্ত্রণ চলে আসে হাসমতের দখলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বন্ধ হয়নি হাসমত আলীর অবৈধ ঝুট ব্যবসা। এবার তার ভাই মাহবুব আলী স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসাটি চালিয়ে যাচ্ছেন। ঝুটের আড়ালে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের যোগসাজশে নিয়মিত পাচার করা হচ্ছে বন্ডের কাপড়। ঝুট বোঝাই গাড়ির মাধ্যমেই রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয় এসব বন্ডের কাপড়। এই অবৈধ ব্যবসা থেকে বিপুল অর্থসম্পদ গড়ে তুলেছেন হাসমত আলী ও তার ভাই মাহবুব আলী।
কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর এলাকার মনু মিয়ার দুই ছেলে হাসমত ও মাহবুব বর্তমানে কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক। তাদের নামে রয়েছে দুটি বহুতল ভবন, একাধিক গাড়ি এবং প্রায় ১০ কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি। এর বড় অংশ কেনা হয়েছে হাসমত আলী ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তারের নামে এবং মাহবুব আলী ও তার স্ত্রী নুর নাহার বেগমের নামে। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনের নাম ব্যবহার করেও তারা বিভিন্ন সম্পত্তি ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা হাসমত আলী বলেন, তিনি অবৈধ কোনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বৈধভাবে ব্যবসা করে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। এখনও সবাইকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করছেন বলে তিনি জানান।