পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) সুকান্ত দাসকে পুলিশি হেফাজত থেকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর (কেএমপি) ঘেরাও করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। একই সঙ্গে কেএমপির প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে তারা। এছাড়া মূল ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করে রেখেছে তারা। ফলে রূপসা থেকে শহরে প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে যায়। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।

বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকেল পৌণে ৫টায় সড়কে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে স্থানীয়রা মারধর করে উপ-পরিদর্শক সুকান্তকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তিনি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানায় কর্মরত আছেন। আদালতে একটি মামলার সাক্ষী দিতে খুলনায় এসেছিলেন তিনি। তার নামে খুলনা সদর থানায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় গত ১২ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি বর্তমানে ডিবিতে তদন্তাধীন। এছাড়া বিএনপির মহানগর সভাপতি এডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ দুটি মামলা চলমান রয়েছে। খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবীর হোসেন বলেন, এস আই সুকান্ত আদালতে সাক্ষী দিয়ে বাইকযোগে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। এসময় শিরোমণি এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। এসময় পুলিশ ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি চলে যান। তার বিরুদ্ধে খানজাহান আলী থানায় কোন অভিযোগ নেই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও খুলনা জেলা শাখার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, খুলনায় জুলাই আন্দোলন দমাতে শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলা সুকান্তকে কীভাবে ছেড়ে দেওয়া হলো? জুলাইযোদ্ধারা কি তাহলে আইনকে হাতে তুলে নেবেন? নিপীড়ক পুলিশ কর্মকর্তা সুশান্তকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের অফিস ঘেরাও করা হয়।

এনসিপি খুলনার প্রধান সংগঠক আহম্মদ হামীম রাহাত বলেন, শুনছি আওয়ামী পুলিশ লীগের অন্যতম নেতা জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্রদের ওপর হামলাকারী স্বৈরশাসকের দালাল সাবেক সোনাডাঙ্গা থানা ও পরে খুলনা থানার এসআই সুকান্তকে খানজাহান আলী থানা পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী এসআই সুকান্তকে গ্রেফতরের দাবিতে কেএমপি ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

খুলনা নগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৈমুর ইসলাম জানান, এসআই সুকান্ত বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানায় কর্মরত। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানা ও সদর থানায় কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মনার বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে একটি ও আরেকটি জিআর মামলা রয়েছে। এছাড়া আদালতে তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা রয়েছে। পরে রাতে খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন জানান, তাকে দৌলতপুর থানায় পাঠানো হয়েছে। দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাহার হোসেন জানান, তার থানায় এসআই সুকান্তকে আনা হয়নি। আবার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় যোগাযোগ করা হলে সেখানেও এসআই সুকান্তকে পাওয়া যায়নি। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার সানোয়ার হুসাইন মাসুম জানান, তার থানাতেও নেই সুকান্ত।

কেএমপির সহকারী উপ-কমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) খন্দকার হোসেন আহম্মেদ জানান, এসআই সুকান্তের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তবে সে এখন কোথায় আছে বা কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তা জানা নেই। এসআই সুকান্ত নগরীর কোনো থানায় নেই জানাজানি হওয়ার পর ক্ষুব্ধ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এজন্য তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে কেএমপি ঘেরাও করার ঘোষণা দেন।