কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ভালো ফলন পেলেও খরচের তুলনায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা চাষীরা। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানী করা না হলে দেশের উৎপাদিত পেয়াজের দাম কিছুদিন পর বাড়তে পারে বলেও জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে অনেকেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ২৪২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বাস্তবে আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৯ হেক্টর জমিতে। তবে বেসরকারি হিসেবে পেঁয়াজ চাষের পরিমাণ আরো বেশি বলে জানা গেছে। বর্তমানে কৃষকরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন ও তা পরিস্কার করে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এ বছর কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজের চাহিদা ৫০ হাজার মেট্রিক টন। অথচ উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন, ফলে চাহিদার তুলনায় ১ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে।
চাষিরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজের বীজ ও চারার দাম কম থাকায় চাষে আগ্রহ বেড়েছে। তবে শ্রমিকের মজুরি, সেচ খরচ ও মাটি প্রস্তুতের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা কিছুটা হতাশ। গত বছর যেখানে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে, সেখানে এবার তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে। এতে করে অধিকাংশ কৃষক লাভের চেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুষ্টিয়া জানায়, এ বছর কৃষকেরা ‘তাহেরপুরী’, ‘বারী পেঁয়াজ-১’, ‘কিংসুপার’ ও ‘ মেটাল’ জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন। উপজেলাভিত্তিক পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে কুষ্টিয়া সদরে ২,২৩০ হেক্টর, খোকসায় ২,৭৯৫ হেক্টর, কুমারখালীতে ৪,৯২০ হেক্টর, মিরপুরে ৫২৮ হেক্টর, ভেড়ামারায় ২৩৫ হেক্টর, দৌলতপুরে ৩,২৭১ হেক্টর। মাঠ পর্যায়ে কৃষকেরা জানান, বাস্তবে আবাদকৃত জমির পরিমাণ সরকারি তথ্যের চেয়েও বেশি।
চাষিরা আরো জানান, গেল বছর যে পেঁয়াজের বীজ ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, তা এবার ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় পাওয়া গেছে। চারার দামও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। উৎপাদন ব্যয় বিঘা প্রতি প্রায় ২৮ থেকে ৩২ হাজার টাকা। ভালো ফলনে বিঘা প্রতি ৪৫ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যা”েছ, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারার মহিউদ্দিন বলেন, এ মৌসুমে পেঁয়াজের চারা ভালো হয়েছে। তাই চারা কিনে পেয়াজ রোপন করতে হয়েছে।
মিরপুরের পেয়াজ চাষি রহিম উদ্দিন বলেন, কেনা বীজ কিনে তারা মার খেয়েছেন। তাদের পেঁয়াজ মাঠে ভালো হয়নি। যা হয়েছে তা দিয়ে খরচ উঠবেনা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ও কুমারখালী, খোকসা উপজেলায় পেয়াজের আবাদ ভালো হলেও ন্যায্য দাম পা”েছনা চাষীরা। তবে কিছুদিন পরে ভালো দামের আশায় পেঁয়াজ ঘরে উঠিয়ে রাখছেন অনেকেই।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কুষ্টিয়ার মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তাই পেঁয়াজ চাষ এ জেলায় ভালো হয়ে থাকে। এ বছরও মোটামুটি পেঁয়াজ ভালো হয়েছে। আগামীতে এ চাষ আরোও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেন কুষ্টিয়া কৃষি বিভাগ। তবে চাষীরা বললেন ভিন্ন কথা তারা অভিযোগ করেন কৃষি বিভাগ তাদেরকে তেমন কোন সহযোগিতা করেননা। পেয়াজ চাষে পরামর্শ ও সহযোগিতা করলে ও দাম ভালো পেলে পেঁয়াজ আবাদে চাষীরা উৎসাহী হতো। কিš‘ কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও দাম ভালো কোনটিই পাচ্ছে না চাষীরা। তাই এ অবস্থা চলতে থাকলে পেঁয়াজ আবাদে ভাটা পড়তে পারে বলে জানান বিজ্ঞ চাষিরা।