ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের সীমানা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) শুনানির সময় বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা অভিযোগ করেছেন, তাঁর নিজের দলের কর্মীরাই তাঁকে ধাক্কা দিয়েছেন। তবে এনসিপির দাবি, রুমিন ফারহানার নেতৃত্বেই তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে।

গতকাল রোববার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বেলা ১২টার দিকে শুনানি শুরু হয়। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের খসড়া সীমানার ওপর শুনানি গ্রহণ শুরু করে ইসি। এর একপর্যায়ে দুই পক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং মারামারি শুরু করেন। তারপর ইসি কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে ইসি সচিব ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের জন্য শুনানি শেষ করেন এবং তাদের শুনানি কক্ষ ত্যাগ করার অনুরোধ জানান। শুনানিতে অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ইসির প্রকাশিত খসড়ার পক্ষে তার যুক্তি তুলে ধরেন। আর অন্যান্য বেশ কয়েকজন খসড়ার বিপক্ষে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন।

দলীয় কর্মীর ওপর অভিযোগ রুমিন ফারহানার: নিজ দলের নেতা-কর্মীদের হাতে শুনানিতে হামলার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।

তিনি বলেন, যেহেতু ওদের ১০ জন ১২ জন মিলে কথা বলছে। সো আমি একজন কথা বলেছি আর আমার পক্ষে একজন ডাক্তার উনি কথা বলেছেন। আমি কোনো গুন্ডা বদমাশের মেলা করি নাই। করতে চাইলে করতে পারতাম। গুন্ডা আনতে চাইলে গুন্ডা আনা যায়। অসুবিধা হয় না। আমি ভদ্রলোক নিয়ে এসেছি। কিন্তু তারা যেহেতু গুন্ডাপান্ডা নিয়ে এসেছে এবং আবলতাবল লোক কথা বলেই যাচ্ছে, আমি লাস্টে একটা কথা বলার জন্য দাঁড়িয়েছি এবং যেটা ১৫ বছরে হয়নি সেটা আজকে হয়েছেÑঅলমোস্ট আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যেই বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য গত ১৫ বছর লড়াই করলাম তারা আমাকে এখন ধাক্কা দেয়, তো ঠিক আছে ধাক্কার বদলে তো ধাক্কা আসবেই।

এদিকে এনসিপি নেতা অভিযোগ করেছে আপনার লোকজন হামলা করেছে। এ বিষয়ে সামনে আনলে তিনি বলেন, উনি এনসিপি থেকে এসেছেন নাকি অন্য কোনো দল থেকে এসেছেন তা বোঝা মুশকিল। কারণ তিনি পরিচিত মুখ নন। একজন পাঞ্জাবি পরা লোক আমাকে ধাক্কা দিয়েছে, তারপরে আমার লোক তো বসে থাকবে না। আমি তো একজন মহিলা এবং পরে যখন আমার লোকজন মারধর করেছে, আমার লোকজন জবাব দিয়েছেÑসিম্পল।

বিএনপির নেতৃত্বে হামলা কমিশনকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনসিপির

এদিকে রুমিন ফারহানার নেতৃত্বেই শুনানিতে হামলার শিকার হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, কমিশনের কার্যালয়ের সামনেই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, যা প্রমাণ করে আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে। বিএনপির নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন চাইলে গুন্ডা নিয়ে আসতে পারতেন। বাইরে লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। কমিশনের অফিসের সামনে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সারা দেশে তারা কিভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে সেটির টেস্ট ম্যাচ হয়ে গেল।

রুমিন ফারহানার বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে বলেন, রুমিন ফারহানা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ফ্ল্যাট নিয়েছেন, আবার আওয়ামী লীগের পতনে কষ্ট পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি আওয়ামী লীগপন্থী আচরণ করছেন। বিএনপির ভেতরে এমন অনেক নেতা আছেন যারা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী।

হামলার শিকার আতাউল্লাহর অভিযোগ

এ সময় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা আতাউল্লাহ অভিযোগ করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সীমানা শুনানিতে অংশ নিতে গিয়ে তিনি রুমিন ফারহানা ও তার সমর্থকদের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, আমাকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। পরে শুনানির ভেতরে ঢুকলে রুমিন ফারহানা ধাক্কা দেন এবং তার সন্ত্রাসীরা আমাকে মাটিতে ফেলে মারধর করে। আমার সঙ্গে থাকা আরও দুজন নেতাকর্মীকেও প্রহার করা হয়েছে। সিসিটিভিতে সবকিছু দেখা যাবে।

আতাউল্লাহ বলেন, যদি এ ঘটনার বিচার না হয় তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে।

ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এনসিপির নেতা জয়নাল আবেদিন শিশির বলেন, ‘আমরা বহুবার বলেছি এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। আজকের হামলার মাধ্যমে আবারও তার প্রমাণ মিলেছে। ইসির সামনেই আমাদের নেতার ওপর হামলা হলো, অথচ হামলাকারীরা নির্বিঘেœ চলে গেল।’

রোববার কুমিল্লা অঞ্চলের শুনানি শেষ করেছে ইসি। এতে ৬ জেলার ১৮ আসনের ৮১১টি দাবি-আপত্তির শুনানি গ্রহণ করে সংস্থাটি। এর মধ্যে আপত্তি ছিল ৪২৯টি আর পরামর্শমূলক আবেদন ছিল ৩৮২টি। ২৫ আগস্ট খুলনা অঞ্চলের ৯৮টি, বরিশাল অঞ্চলের ৩৮১টি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২০টি দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। ২৬ আগস্ট ঢাকা অঞ্চলের ৩১৬টি দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। ২৭ আগস্ট রংপুরের সাতটি, রাজশাহীর ২৩২টি, ময়মনসিংহের তিনটি, ফরিদপুরে ১৮টি এবং সিলেট অঞ্চলের দু’টি দাবি-আপত্তির শুনানি হবে।

গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮৩টি আসনের সীমানা নিয়ে ১ হাজার ৭৬০টি দাবি-আপত্তি জমা পড়ে ইসিতে। এগুলোই নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে ইসি।

গত ৩০ জুলাই ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গিয়ে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে ছয়টি করা হয় এবং বাগেরহাটের আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়।

এছাড়া পরিবর্তন আনা হয় মোট ৩৯টি আসনে। এগুলো হলোÑপঞ্চগড় ১ ও ২; রংপুর ৩; সিরাজগঞ্জ ১ ও ২; সাতক্ষীরা ৩ ও ৪; শরীয়তপুর ২ ও ৩; ঢাকা ২, ৩, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯; গাজীপুর ১, ২, ৩, ৫ ও ৬; নারায়ণগঞ্জ ৩, ৪ ও ৫; সিলেট ১ ও ৩; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ ও ৩; কুমিল্লা ১, ২, ১০ ও ১১; নোয়াখালী ১, ২, ৪ ও ৫; চট্টগ্রাম ৭ ও ৮ এবং বাগেরহাট ২ ও ৩ আসন। ইসির প্রকাশিত ওই খসড়ার তালিকার ওপর গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত আপত্তি আহ্বানও করা হয়।

আগে বাগেরহাট-১ মোল্লারহাট-ফকিরহাট-চিতলমারি; বাগেরহাট-২ বাগেরহাট সদর এবং কচুয়া; বাগেরহাট-৩ রামপাল এবং মোংলা; বাগেরহাট-৪ মোড়েলগঞ্জ এবং শরণখোলাÑএই চারটি আসন ছিল বাগেরহাটে।

খসড়ায় বাগেরহাট-১ আসনে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বাগেরহাট সদর, কচুয়া, রামপাল নিয়ে বাগেরহাট-২ আসন এবং মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ আসন প্রস্তাব করা হয়েছে।

সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেছেন, ৬৪ জেলার গড় ভোটার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০। এটা ধরে জেলায় একটি আসন বাড়ালে তা গাজীপুরে হবে। এ গড়ের কম বাগেরহাটে একটি কমালে সমতা চলে আসে। দুই জেলার আসনই এফেক্টেড হয়েছে। আর কোথাও ঝামেলা নেই। ৩৯টি আসনে অ্যাডজাস্টমেন্ট রয়েছে।