ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেয়াই ও সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেনের সহকারী একান্ত সচিব-এপিএস এ এইচ এম ফুয়াদের সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ফরিদপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ফুয়াদের ৫ কোটি ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫৮৬ টাকা মূল্যমানের একটি ফ্ল্যাট ও ৩৮ দশমিক ৯৩৩ শতাংশ জমি ক্রোক করার বিষয়টি গতকাল সোমবার সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দিলেও আদালত কবে এই আদেশ দিয়েছে, তা বলা হয়নি।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় গেল ৩ অগাস্ট মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলার সূত্র ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুসন্ধানকালে সিআইডি জানতে পারে ফুয়াদ বিগত সরকারের সময় ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে ফরিদপুর শহরের আধিপত্য বিস্তারের জন্য হেলমেট বাহিনী নামের একটি বাহিনী তৈরি করেন। সেই বাহিনীর সাহায্যে এএইচ এম ফুয়াদ এলজিইডি, স্বাস্থ্য প্রকৌশলী, শিক্ষা অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, বিএডিসি, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ অফিস, রোডস অ্যান্ড হাইওয়েসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরগুলোর টেন্ডারসমূহ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। এসব টেন্ডার হতে বিভিন্ন হারে কমিশন গ্রহণ করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পত্তি অর্জন করে। টেন্ডারবাজি ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তিদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেও অর্থ উপার্জনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানের বরাতে সিআইডি দাবি করেছে, ফুয়াদ নিজের নামে ছাড়াও প্রথম স্ত্রী ফারজানা ফুয়াদ, দ্বিতীয় স্ত্রী তাছলিমা আক্তার বাবলী, দ্বিতীয় পক্ষের শাশুড়ি নাদিরা বেগমসহ নামে-বেনামে বহু জায়গা জমি কিনে ভাই ও ভাগিনার মতো আত্মীয়দের হাতে দখলদারিত্বের দায়িত্ব দেন। এমনকি বেনামে বিলাসবহুল বাস কিনে পরিবহনখাতেও বিনিয়োগের তথ্যও সিআইডির অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান শেষে সিআইডি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ফুয়াদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে।

বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট পরিচালনা করছে তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই আওয়ামী লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডির করা মামলার অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় চার নম্বরে এএইচএম ফুয়াদের নাম রয়েছে।

২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকার বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় পুলিশ। তখন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জামাল পাশা বলেছিলেন, মানি লন্ডারিং মামলাসহ মোট আটটি মামলার আসামি ফুয়াদ। তার নামে তিনটি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। তার আগে ২০২০ সালের ২৬ জুন অর্থ পাচারের মামলার আসামি হওয়ার পর তাকে ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারণ করা হয়।