মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান, মোংলা থেকে : সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা হিসেবে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চলতি নভেম্বরেই দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেনÑকেন্দ্রটির অবকাঠামোগত নির্মাণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, পর্যটন ফ্যাসিলিটি এবং পরিচালন প্রস্তুতিসহ প্রায় সবকিছুই এখন কার্যত প্রস্তুত। তাদের প্রত্যাশাÑএটি এই অঞ্চলের টেকসই পর্যটনে নতুন দিক নির্দেশ করবে এবং বিশেষভাবে বরিশাল অঞ্চলের পর্যটন গতিশীলতায় দৃশ্যমান অবদান রাখবে।
তবে উদ্বোধনের আগেই প্রবেশ ফি নিয়ে কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অন্যান্য বিদ্যমান স্পট যেমন করমজল ইত্যাদির তুলনায় আলীবান্দায় নির্ধারিত প্রবেশমূল্য তুলনামূলক অনেক বেশিÑএ কারণেই অনেক পর্যটক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
শরণখোলা রেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে ওঠা এই কেন্দ্রটিতে পৌঁছাতে শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের যাত্রা লাগে। নদীর নোনা জল, ঘন ম্যানগ্রোভ বনের দৃশ্য, পাখির ঝাঁক, এবং সুন্দরীÑগেওয়া গাছের সারিÑপুরো পথজুড়েই প্রকৃতির অক্ষত সৌন্দর্যের অনুভূতি পাওয়া যায়।
বন বিভাগ জানায়Ñ২০২২Ñ২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে ছয়তলা সমতুল্য একটি ওয়াচ টাওয়ার, ১.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াকওয়ে, মিঠাপানির পুকুর, জেটি, বিশ্রামাগার, হরিণ রাখার সেডসহ পর্যটন সুবিধা যুক্ত হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বনরক্ষী ও প্রশিক্ষিত গাইডের উপস্থিতির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বরিশাল বিভাগের সাতটি জেলার মানুষের জন্য এটি তুলনামূলকভাবে সহজগম্য সুন্দরবন স্পটÑতাই এখানে স্থানীয় পর্যটক প্রবাহ বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে গাইড, নৌযানচালক, খাবার ও আবাসন ব্যবসায়ীÑসব মিলিয়ে স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
তবে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জটি হলোÑপ্রবেশ ফি। যেখানে করমজলে প্রবেশ মূল্য ৪৬ টাকা, সেখানে আলীবান্দার ফি ৩৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছেÑযা নিয়ে এক ধরনের হতাশা ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। পর্যটক ও ট্যুর অপারেটরদের মতে—এ পার্থক্য সাধারণ পর্যটকদের উৎসাহ কমিয়ে দিতে পারে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও রেজাউল করিম চৌধুরী জানিয়েছেনÑআলীবান্দা যেহেতু ২০১৭ সালে ঘোষিত অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত অংশ, তাই বিধিনিষেধ ও ব্যবস্থাপনা খরচের বিষয় বিবেচনায় ফি তুলনামূলক বেশি রাখা হয়েছে। তবে তিনি আরও জানানÑপর্যটকদের প্রতিক্রিয়া সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে এবং প্রয়োজনে নীতিগত আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।