ফেনীতে নদী সমূহের পানি ধীরে ধীরে নামছে। বৃষ্টি আর না হলে জেলার বন্যা কবলিত পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী (আংশিক) ও দাগনভূঞা (আংশিক) উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলার ১০৯ টি গ্রামের জনগণের দূর্ভোগ কমাতে সকল অংশীজনকে নিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ৮২ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৯২০০ মানুষ অবস্থান করছেন।
তাদের জন্য রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সূত্র আরো জানিয়েছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার বন্যার্তদের জন্য মানবিক সহায়তা ও আশ্রয় কেন্দ্র সমূহে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীগণ, সেনাবাহিনী,বিজিবি, রাজনৈতিক দল সমূহ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। জেলা প্রশাসন পশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় ১৫০০ প্যাকেট খাবার ও উপজেলা পর্যায়ে ক্রয়-কৃত খাবার ২৭০০ জন দুর্গতের মাঝে বিতরণ করেছেন। একজন গর্ভবতী নারী ও ১৮ জন অসুস্থ বৃদ্ধকে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার করেছে।
এদিকে ফুলগাজী উপজেলার বন্ধুয়া গ্রামের নুরুল আলম (৬৫) নামে এক ব্যক্তি বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে জালের সাথে আটকে মৃত্যুবরণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। সভায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় মুছাপুর রেগুলেটর ও বামনি ক্লোজারের নকশা চূড়ান্ত কারণ, ফেনীতে স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত,তীর প্রতিরক্ষা ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে বলেও উপদেষ্টা মন্ডলীকে অবহিত করা হয়।
অপরদিকে সচেতন ফেনীবাসী দীর্ঘদিন থেকে দাবী করছেন যে, নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এবং নদীর নাব্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু না করলে অন্য সকল ব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে পড়বে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি,এনসিপি, খেলাফত মজলিস, ছাত্রশিবির ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম,জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান,৪ ব্যাটেলিয়ন বিজিবি অধিনায়ক লেঃকর্নেল মোশাররফ হোসেন, সেনাবাহিনীর ফেনীর দায়িত্বশীল লেঃকর্নেল ফাহিম ও মেজর শাকিল তাঁদের পুরো টিম নিয়ে বানভাসিদের পাশে দাড়িয়েছেন।
এছাড়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। ফেনী জেলা জামায়াতের আমীর মুফতি আব্দুল হান্নান সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কখনো এক বুক পানিতে নেমে কখনো নৌকায় আবার কখনো ট্রাক্টরে করে বিরামহীন ছুটে চলেছেন বানভাসিদের সেবায়। বন্যার শুরুতেই ছাত্র শিবিরের গঠিত ‘কুইক রেসপন্স টীম’ প্রতিটি উপজেলায় জেলা সভাপতি ও শহর-সভাপতির তত্ত্বাবধানে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।