দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে টানা চার দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে মানুষের ঢল নেমেছে পথে পথে। ফলে প্রধান দুটি সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট গতকাল বুধবার দিনভর তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাচপুর থেকে শুরু করে আড়াইহাজারের পাচরুখি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটারে দিনভর যানজট দেখা গেছে। বিভিন্ন বাস যাত্রীরা বলেছেন, মহাসড়কে মাত্র ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা। দীর্ঘ যানজটের কারণে যাত্রী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের জীবনযাত্রাও ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতির জন্য হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রমের অভাব এবং সড়কের সংকটজনিত সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করছেন বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও স্থানীয়রা।

সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যান চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে আশারির চর পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এবং ঢাকা সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে আড়াইহাজারের পাচরুখি পর্যন্ত পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার যানজট রয়েছে। সূত্র জানায়, যানজটের কারনে যাত্রাবাড়ি, শনিআখড়া, রায়েরবাগ , সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোডের বাস কাউন্টারগুলোতে এখনো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যানজট ও বাস সংকটের কারণে অনেক যাত্রীকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, হাইওয়ে পুলিশের পর্যাপ্ত উপস্থিতি নেই। ফলে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা থেকে আমরা এই সড়কে আটকা। মাত্র ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে বিকেল ৩টা হয়ে গেছে। হাইওয়ে পুলিশ কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তৌফিক নামের একজন বাস যাত্রী বলেন, বেলা ১১টার দিকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে গাড়ি ছেড়েছে, এখন ৩টা বাজে, আমি কাঁচপুর পার হতে পারিনি। সড়কে ছোট ছোট গাড়ি, ট্রাক সব একত্র হয়ে বিশাল যানজট তৈরি করেছে। কেউ নেই যিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন।

হাইওয়ে পুলিশ জানায়, যানজট মূলত দুর্গাপূজার ছুটিতে গ্রামে যাওয়া মানুষের ঢল এবং কিছু খারাপ সড়কের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি মারাত্মক। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি আরও কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক যাত্রী জানান, খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেছে। চট্টগ্রামগামী বাসের যাত্রী মারুফ বলেন, আমরা বাসে বসে প্রায় ৫ ঘণ্টা পার করে দিয়েছি। খাওয়ার জন্য কিছু নেই। হাইওয়ে পুলিশ কোথায় ছিল, কেউ জানে না। যানজট শুধু যাত্রীদের জন্য নয়, ব্যবসায়ীদের জন্যও সমস্যা তৈরি করেছে। মহাসড়কের পাশে থাকা দোকানদার এবং হকাররা জানান, দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকা থাকায় তাদের ব্যবসা ব্যাহত হচ্ছে।

বাস কাউন্টার মালিকরা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থা এখনো পর্যাপ্ত নয়। সড়কের সম্প্রসারণ, পর্যাপ্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়া দীর্ঘ যানজট এড়ানো সম্ভব নয়। দেশের লাইফ লাইন খ্যাত এই সড়কে মিনিটে প্রায় ৫০টি গাড়ি চলাচল করে। সামান্য সময়ের জন্য রাস্তা বন্ধ হলে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও ছুটির কারণে মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি গাড়ির চাপ বেড়েছে। এতে যানবাহনের গতি কমে গিয়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। এখন যানবাহন চলাচল করছে। ধীরে ধীরে যানজট স্বাভাবিক অবস্থায় কমে আসবে।

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে যাত্রীদের পিছু ছাড়ছে না দুর্ভোগ

কবির আহমদ, সিলেট ব্যুরো : সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ছয়লেনের কাজ ধীরগতিতে চলছে। কিন্তু বড়ই বিপাকে পড়েছেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী হাজারো যাত্রীসাধারণ। দুর্ভোগ-দুর্যোগ নিত্যদিনের সাথী হয়ে দাড়িয়েছে যাত্রীদের। এ দুর্ভোগ যেন যাত্রীদের পিছু ছাড়ছে না। প্রতিদিনই সায়দাবাদ কিংবা যাত্রাবাড়ী থেকে বাসযোগে বা প্রাইভেট গাড়ি দিয়ে সিলেট নগরীতে ঢুকতে লাগে ১৮-২০ ঘন্টা, তেমনিভাবে ঢাকায় ফিরতেও একই সময় ব্যয় হচ্ছে। যেখানে ঢাকা-সিলেট কিংবা সিলেট-ঢাকা যাতায়াত করতে সর্বোচ্চ ৬-৭ ঘন্টা সময় লাগতো, এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় ৪ দিনের ছুটির প্রভাব পড়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, সাদাপাথরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে সিলেটে আসা হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রায় ১৮ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজটে প্রতিদিন পড়তে হচ্ছে তাদের।

যাত্রীসাধারণ জানান, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ, ভৈরব, নরসিংদী ও নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারের বিভিন্ন অংশে গাড়ি চলছে থেমে থেমে, অনেকটা খেয়ার নৌকার মতো। আবার সিলেটে প্রবেশদ্বার চন্ডিপুল থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত বাইপাস সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রায় প্রতিদিনই যানজট লেগেই থাকে। সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ফারুক আহমেদ নামে এক কর্মকর্তা জানান, দূর্গাপূজার ছুটিকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী যানবাহন রাস্তায় নেমেছে। বৈরী আবহাওয়া ও অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে যানজটের মাত্রাও কয়েকগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি রিজার্ভ পুলিশ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন সম্ভব হচ্ছেনা।

ঢাকা থেকে আসা সিলেটের উপশহরের ফাহিম জালাল জানান, সাধারণত সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা টোলপ্লাজা পর্যন্ত যেতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগে। কিন্তু আজ তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। এতে যাত্রীসাধারণ এই প্রচন্ড গরমের মধ্যে যানজটে আটকা পড়ে চরম কষ্টে সিলেটে এসেছেন।

কথা হলো সিলেটের মদনমোহন সরকারি কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ সর্বানী অর্জুনের কন্যা জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক স্বপ্নীলা চৌধুরী তুলতুল উরফে পাঁপড়ির সাথে। তিনি জানান, দুর্গাপূজার ছুটিতে ঢাকা থেকে সিলেটে আসতে প্রায় ১৮ ঘন্টা সময় লেগেছে। তার মতো অনেক যাত্রী এই যানজটে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থ হয়েছেন মিসেস তুলতুল নিজেও। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এইভাবে চলতে থাকলে সিলেট কিংবা ঢাকা থেকে যথাযথ স্থানে গিয়ে মানুষের কাজ-কর্ম কিংবা, ডাক্তার দেখানো কঠিন হয়ে পড়বে। অনতিবিলম্বে এই বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর দেয়ার জোর দাবি জানান জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা কাজ করছি। গাড়ির চাপ কমলে যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক হবে।