কুড়িগ্রামে ছাত্র শিবিরের উদীয়মান তরুণ শহীদ রফিকুল ইসলাম রফিক হত্যা মামলার আসামিসহ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীর বিএনপিতে যোগদান নিয়ে জেলাজুড়ে তীব্র নিন্দাসহ আলোচনা সমালোচনার ঝড়ের মুখে পরেছে বিএনপি।
জেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজ এ ঘটনাকে ‘ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন’ এবং ‘শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
জানা যায়, শনিবার (২০ ডিসেম্বর-২০২৫) কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন আওয়ামীলীগের এসব নেতাকর্মী। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান হাসিব এবং সদস্য সচিব ও কুড়িগ্রাম-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ ফুল দিয়ে তাদের দলে বরণ করে নেন।
ফুলের মালায় জড়িয়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন- পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান স্থগিত কাউন্সিলর আনিসুর রহমান ওয়ার্ড নম্বর সাত, কুড়িগ্রাম পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল হারুনুজ্জামান হারুন ওয়ার্ড নম্বর ৫, মোস্তফা কামাল কুড়িগ্রাম ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর, জমশেদ আলী টুংকু ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামীলীগ সদস্য, আবদুল মালেক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং কখনো আলীগ কখনো জাতীয় পার্টি এবং সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সহিরন বেগম ৬,৭,৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং আওয়ামীলীগ সদস্য, ও মুক্তা বেগমসহ মোট ৯জন।
এদের মধ্যে আনিসুর রহমান কুড়িগ্রামের আলোচিত ছাত্রশিবিরের উদীয়মান তরুণ কর্মী রফিকুল ইসলাম রফিক হত্যা মামলার আসামি বলে জানা গেছে।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই বিএনপির এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক নৈতিকতার প্রশ্নে বিতর্কিত বলে মন্তব্য করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির সম্মুখ যোদ্ধা কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক আহ্বায়ক আবদুল আজিজ নাহিদ বলেছেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টদেরকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করছি একইসাথে বিএনপিকে বিতর্কিত সকল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে তাদের প্রতি-ও অনুরোধ রইল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলার বর্তমান আহ্বায়ক লোকমান হোসেন লিমন বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট নেতাদের দলে নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়েছে। এতে শত শত শহীদ ও সহস্রাধিক আহত মানুষের আত্মত্যাগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক মোঃ মুকুল মিয়া বলেন, ‘বিতর্কিত নেতাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া মানে পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেওয়া। এটি জুলাই আন্দোলনে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানির শামিল।
কুড়িগ্রাম জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী সাবেক ছাত্রনেতা মাওলানা মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, হত্যা মামলার আসামিসহ পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাদের বিএনপিতে আশ্রয় দেওয়ায় আমরা লজ্জিত। এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এমন বিতর্কিত আওয়ামী ফ্যাসিস্টদেরকে পুনর্বাসন কর্মকাণ্ডের জন্যই বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হবে। এটা আবু সাঈদ-মুগ্ধ ও হাদির রক্তের সাথে বে-ঈমানি ছাড়া আর কি হতে পারে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, যারা যোগ দিয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নন। এদের মধ্যে ২/১ জনের আগে পদ থাকলেও বাকিরা ৫ আগস্টের আগেই পদত্যাগ করেছেন। তাদের নামে কোনো মামলা নেই।