চট্টগ্রামে বিএনপি কর্মী সরোয়ার হোসেন বাবলা হত্যার ঘটনায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার পর র‌্যাব অভিযান চালিয়ে এক যুবদল নেতা ও কর্মীসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে মামলার অন্যতম আসামী কুখ্যাত সন্ত্রাসী রায়হান আলম এখনো ধরা পড়েনি। এদিকে গুলীবিদ্ধ বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।

বাবলা হত্যায় মামলা ও গ্রেফতার

সরোয়ার হোসেন বাবলা হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর শুক্রবার সকালে নিহতের বাবা আবদুল কাদের নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ২৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিদেশে পলাতক দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ এবং তার বাহিনীর কিলিং স্কোয়াড প্রধান রায়হান আলমসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যরা হলেন বোরহান উদ্দিন, নেজাম উদ্দিন, আলাউদ্দিন, মোবারক হোসেন ওরফে ইমন এবং হেলাল ওরফে মাছ হেলাল। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১৫-১৬ জনকে আসামী করা হয়েছে।

বায়েজিদ থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, মামলার আসামীদের মধ্যে আলাউদ্দিন ও হেলালকে র‌্যাব শুক্রবার সকালে চান্দগাঁও থানার হাজীরপুল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। আলাউদ্দিন যুবদলের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি এবং হেলাল যুবদল কর্মী বলে জানা গেছে।

মামলার এজাহারে সরোয়ারের বাবা অভিযোগ করেন, বিদেশে থাকা সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী দীর্ঘদিন ধরে তার ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ ২ নভেম্বর রাতে ফোনে হুমকি দিয়ে সাজ্জাদ বলেন, “সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।” এরপর ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনি প্রচারণার সময় সরোয়ারকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গুলীবিদ্ধ এরশাদ উল্লাহ ঢাকায়

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ বর্তমানে শঙ্কামুক্ত হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার দুপুরে হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি এর আগে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আজম খাজা জানান, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন এরশাদ উল্লাহ আশঙ্কামুক্ত।

কিলিং স্কোয়াড প্রধান রায়হান এখনো পলাতক:

র‌্যাব ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ‘বড় সাজ্জাদ’ বাহিনীর কিলিং স্কোয়াড প্রধান রায়হান আলম গত এক বছরে চট্টগ্রাম, রাউজান ও হাটহাজারীতে অন্তত নয়টি হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছে। সর্বশেষ সে সরোয়ার হোসেন বাবলাকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলী করে হত্যা এবং বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহকে গুলীবিদ্ধ করার ঘটনায়ও সরাসরি জড়িত।

৩৫ বছর বয়সী এই সন্ত্রাসীর প্রকৃত নাম মোহাম্মদ রেকান আলম। সে রাউজান উপজেলার পূর্ব রাউজানের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, রায়হান পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় অবস্থান নেয় এবং নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করে বলে তাকে গ্রেফতার করা কঠিন হয়ে পড়ছে। মাঝে মাঝে সে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যায় বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় বায়েজিদ থানার হাজীপাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণার সময় সরোয়ারকে গুলী করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে সরোয়ারকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলী করে হত্যা করে এবং এরশাদ উল্লাহর পায়ে গুলী লাগে। ঘটনাস্থল থেকেই সরোয়ারের মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে পিস্তলধারী রায়হান বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম জানান, “গুলীটি করেছে রায়হান বলে আমরা ধারণা করছি। তদন্তে অগ্রগতি আছে, দ্রুতই আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।”

বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে সরোয়ারের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং রাতে দাফন সম্পন্ন হয়। নিহতের বাবা আবদুল কাদের জানান, বড় সাজ্জাদ, ছোট সাজ্জাদ ও রায়হান নিয়মিত তার ছেলেকে হুমকি দিত। হত্যার তিন দিন আগে রায়হান শেষবারের মতো ফোনে হুমকি দেয়“তোর সময় শেষ।”

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, সরোয়ারকে টার্গেট করেই হামলাটি চালানো হয়েছিল।