খুলনাঞ্চলে টানা তীব্র তাপদাহ আর খরায় আমের গুটি ব্যাপক হারে ঝরে পড়ছে। এমন অবস্থায় ফলন বিপর্যয়ের পাশাপাশি আম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এ অঞ্চলের আমচাষিরা। মওসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আম গাছে প্রচুর মুকুল ধরেছিলো ও আমের গুটি ধরেছে। তারপর টানা তীব্র তাপদাহ ও বৃষ্টির অভাবে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আমের গুটি।

চৈত্র মাসের মাঝামাঝি থেকে প্রচন্ড তাপদাহ শুরু হয়েছে। তীব্র খরায় যেন পুড়ছে দেশ। খুলনাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। দেখা নেই বৃষ্টির। উপকূলে লবণ হাওয়ায় তাপমাত্রা আরও বেশী অনুভূত হচ্ছে। তবে বৃষ্টির অভাবে গুটি ঝরে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আম চাষি ও বাগান মালিকরা।

ডুমুরিয়া উপজেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। লবণাক্ত উপকূল এলাকার এ উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন ধামালিয়া, রুদাঘরা, রঘুনাথপুর, খর্ণিয়া, আটলিয়া, মাগুরাঘোনা, শোভনা, শরাফপুর, সাহস, ভান্ডারপায়া, ডুমুরিয়া সদর, গুটুদিয়া ইউনিয়ানে আম বাগান রয়েছে। উপজেলার বরাতিয়া, ভদ্রদিয়া ও শোভনাসহ বিভিন্ন গ্রামে উন্নত জাতের আমগাছ রয়েছে। এ বছর প্রচুর পরিমাণে আমের গুটি আসায় আমচাষি ও বাগান মালিকরা বুক বেঁধেছে লাভের আশায়। কিন্তু বর্তমানে অনাবৃষ্টি ও তাপদাহে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে স্বপ্নের সেই আমের গুটি। যদিও কেউ কেউ রাত ও খুব ভোরে গাছের গোড়ায় সেচ ও স্প্রে করে চেষ্টা করছেন আমের গুটিকে বাঁচানোর। কিন্তু অধিকাংশ চাষি পুঁজি এবং পানির অভাবে সেচ দিতে পারছেন না। তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে বৃষ্টির অপেক্ষায়। বাগানের দক্ষিণের গাছগুলোর গুটি ঝরেছে। কারণ, দক্ষিণের দিকে সূর্যের তাপ বেশি লাগে। আর উত্তরের গাছগুলোতে সূর্যের তাপ কিছুটা লাগলেও ছায়া থাকে বেশি।

সরজমিনে দেখা যায়, এলাকার আমগাছের নিচে দেখা যায় অসংখ্য ছোট, মাঝারি ও বড় আমের গুটি ঝরে পড়ে রয়েছে। উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের আমবাগান মালিক নবদ্বীপ মল্লিক বলেন, আমার আমের বাগানে খরার কারণে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। তারপর বৃষ্টির দেখা নেই। দিন দিন তাপমাত্রা বাড়ছে। বাগানের গাছে তিন ভাগের এক ভাগ আম ঝরে পড়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় আম নিয়ে বেকায়দায় রয়েছি। ভদ্রদিয়া গ্রামের আমচাষি জগদীশ মন্ডল বলেন, তীব্র খরার কারণে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। আমগাছে সেচ ও কীটনাশক মিশ্রণ স্প্রে করেও গুটি টেকানো যাচ্ছে না। এ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় আম নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।

ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, খরার জন্য আমের গুটি পড়ে যাচ্ছে।

তাপমাত্রা বাড়ার কারণে আমের গুটি কিছু ঝরছে। তবে এ বিষয়ে আমার উপ-সহকারি কৃষি অফিসারসহ উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে আছে ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আমচাষিদের গাছের গোড়ায় পানি দেওয়াসহ ছত্রাকনাশক ওষুধ স্প্রে করার জন্য পরামর্শ দেন। এ সময় আম রক্ষার্থে বাগান মালিক ও চাষিদের গাছের গোড়া মাটি দিয়ে গোল করে বেঁধে বেশি করে পানি দিলে আমের গুটি কম ঝরবে।